বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সোমবার কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ অন্ততঃ ১৪ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সর্টগানের গুলি ও টিয়ার সেল ছুড়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে এদিন কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ভ্রান্ত ধারণা থেকে শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে এ আন্দোলন করছে বলে পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবী করেছে।

পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাইনবোর্ড এলাকায় ইস্ট-ওয়েস্ট গ্রুপের কয়েকটি পোশাক কারখানার অপারেটর ও শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের কাছে গত কয়েকদিন ধরে সরকার ঘোষিত মুজুরী কাঠামো অনুযায়ী বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া না দেওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। তারা পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য তারা কুনিয়া এলাকার লিজ ফ্যাশন ও রূপা গার্মেন্টসসহ বোর্ডবাজার, কুনিয়া তারগাছ ও ছয়দানা এলাকার বেশ কয়েকটি শ্রমিকদের আহ্বান জানায়। একপর্যায়ে ওইসব কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। তারা কারখানা থেকে বেরিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়। এসব শ্রমিকদের সঙ্গে বহিরাগত শ্রমিকরাও যোগ বিভিন্ন কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দরজা জানালার কাঁচসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করতে থাকে। মহাসড়ক অবরোধের কারণে যানবাহন আটকা পড়ে উভয়দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ সাইনবোর্ড এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরে যেতে বললে তারা না মেনে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে পুলিশের চার সদস্যসহ অন্ততঃ ১৪ জন আহত হয়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে দুপুরে পুলিশ টিয়ার সেল ও সর্টগানের গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে। এসময় পুলিশের চার সদস্য আহত হয়। প্রায় দুই ঘন্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হলে বেলা ১২টার দিকে যানচলাচল শুরু হয়।

এদিকে প্রায় একই সময়ে একই দাবীতে সাতাইশ এলাকার ভিয়েলা টেক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ইষ্ট ওয়েষ্ট পোশাক কারখানার সুইং অপারেটর মরিয়ম আক্তার জানান, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম বেতন ৮হাজার টাকা হেলপারদের দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই হারে অপারেটরদের বেতন বৃদ্ধি করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন যাবৎ অপরেটররা তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মানছে না। তাই অপারেটররা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে।

এ ব্যাপারে ইস্ট-ওয়েস্ট কারখানা ব্যবস্থাপক মো. শামীমসহ কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তারা জানান, কারখানার কর্তৃপক্ষ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বেতন ভাতা শ্রমিকদের দিচ্ছে। কিন্তু বহিরাগত কিছু শ্রমিক বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের জোরপূর্বক কারখানা থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে সড়কে গন্ডগোল করেছে। ভুল ধারণা থেকে শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে এ আন্দোলন করছে। সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামোয় পোশাক কারখানার সিনিয়র-জুনিয়র অপারেটরদের মূল বেতনসহ আনুসাঙ্গিক খাতের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারের আগের ঘোষিত গেজেটে কর্মীদের দক্ষতা অনুযায়ী তাদের গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে বেতন ভাতা কম দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বেতনের টাকা হাতে পেলেই শ্রমিকদের ভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। কিন্তু বিভিন্ন মহল সিনিয়র অপারেটরদের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়নি বলে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনে ইন্দন দেয়। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে তারা অযৌক্তিকভাবে বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবীতে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে ভাংচুর করে আসছে। শ্রমিক অসন্তোষ পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কারখানা দেখা দিচ্ছে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে কারখানাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর স্বল্পতা থাকায় মন্ডল গ্রুপের কটন ক্লাব ও মনটেক্স পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আশেপাশের আরো কয়েকটি কারখানাও একই কারণে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব কারখানা খুলে দেওয়া হবে।

গাজীপুরের শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আমিরুল ইসলাম জানান, সরকার ঘোষিত মুজুরী কাঠামো অনুযায়ী বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিয়েলা টেক্স কারখানাসহ গাজীপুরের কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব কারখানা বন্ধ থাকার কথা ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।