টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। সোমবার (৭ জানুয়ারি) বঙ্গভবনের দরবার হলে বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সংখ্যা ৪৭ জন। এর মধ্যে পূর্ণমন্ত্রী রয়েছেন ২৪ জন, প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন ১৯ জন। এছাড়া উপমন্ত্রী রয়েছেন তিন জন। গতকাল রোববার (৬ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ সদস্য শফিউল আলম মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নাম ও দফতর ঘোষণা করেন।

শপথ গ্রহণের জন্য দুপুরের পর থেকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বঙ্গভবনে আসতে শুরু করেন। সঙ্গে আসেন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের পরিবার সদস্য ও স্বজনরা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও এই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।শপথ অনুষ্ঠানে আসা আগের মেয়াদের বিদায়ী মন্ত্রীরা প্রথম সারিতে বসেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে তাদের জন্য ছিল আলাদা আসন।

শপথ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩টা ১৪ মিনিটে বঙ্গভবনে আসেন। বিকেল ৩টা ৩৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দরবার হলে আসেন। এ সময় বিউগলে সুর বেজে ওঠে। রাষ্ট্রপতি আসার পর ৩টা ৩৪ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩টা ৩৯ মিনিটে শপথ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ ও গোপনীয়তার শপথবাক্য পাঠ করেন। শপথ শেষে তিনি ৩টা ৪০ মিনিটে উভয় শপথপত্রে সই করেন তিনি।

এবারের মন্ত্রিপরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্বে রয়েছে পাঁচ মন্ত্রণালয় ও এক বিভাগ। সেগুলো হচ্ছে— মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শপথগ্রহণ শেষে ৩টা ৪৮ মিনিটে একযোগে শপথবাক্য পাঠ করেন ২৪ জন মন্ত্রী। শপথ ও গোপনীয়তার শপথ শেষে তারা ৩টা ৪৯ মিনিটে শপথপত্রে স্বাক্ষর করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ড. আবদুর রাজ্জাক কৃষি মন্ত্রণালয়, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ড. হাছান মাহমুদ তথ্য মন্ত্রণালয়, আনিসুল হক আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থ মন্ত্রণালয়, মো. তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ডা. দীপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এ কে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।এছাড়া এম এ মান্নান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন শিল্প মন্ত্রণালয়, গোলাম দস্তগীর গাজী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, জাহিদ মালেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্য মন্ত্রণালয়, টিপু মুনশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নুরুজ্জামান আহমেদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ ম রেজাউল করিম গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, মো. শাহাব উদ্দিন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, বীর বাহাদুর উ শৈ সিং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভূমি মন্ত্রণালয় ও নুরুল ইসলাম সুজন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এবারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হয়েও মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া সদস্য) কোটায় মন্ত্রী হয়েছেন দু’জন। এর মধ্যে ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং মোস্তাফা জব্বার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। তারাও এ সময় শপথবাক্য পাঠ করেন।বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ নিয়েছেন ১৯ প্রতিমন্ত্রী। বিকেল ৩টা ৫৪ মিনিটে প্রতিমন্ত্রীরা শপথ ও গোপনীয়তার শপথ নেন। এরপর ৩টা ৫৫ মিনিটে তারা শপথপত্রে স্বাক্ষর করেন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কামাল আহমেদ মজুমদার; প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ইমরান আহমেদ চৌধুরী; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জাহিদ আহসান রাসেল; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নসরুল হামিদ বিপু; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আশরাফ আলী খান খসরু; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মুন্নুজান সুফিয়ান; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জাকির হোসেন; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শাহরিয়ার আলম; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জুনাইদ আহমেদ পলক; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ফরহাদ হোসেন; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে স্বপন ভট্টাচার্য; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জাহিদ ফারুক; স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মুরাদ হাসান; সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শরীফ আহমেদ; সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কে এম খালিদ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এনামুর রহমান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মাহবুব আলী শপথ নিয়েছেন। এছাড়া টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।

প্রধানমন্ত্রী, পূর্ণ ২৪ মন্ত্রী ও ১৯ প্রতিমন্ত্রীর শপথের পর বিকেল ৩টা ৫৭ মিনিটে শপথ নিয়েছেন তিন উপমন্ত্রী। বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন হাবিবুন নাহার পরিবেশ। এছাড়া এ কে এম এনামুল হক শামীম পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

এবারের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট অনেক নেতা বাদ পড়েছেন।নতুন মন্ত্রিসভায় নেই মহাজোটের শরিক কোনো দলের সদস্যই। আগের মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির তিন জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকার কারণে এবার তারা মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে না বলে শপথের পরদিনই দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জানিয়েছেন।মহাজোটের অন্য শরিকদের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপির) কেউও মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। আগের মন্ত্রিসভায় জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন ও জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বে।এর আগে, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। দলটি ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায়। তবে জোটগতভাবে পেয়েছে ২৮৮টি আসন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন।

নির্বাচনে জয়ের পর সংসদ সদস্যরা ৩ জানুয়ারি শপথ নেন। ওই দিনই সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। পরে বিকেলে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে রাষ্ট্রপতি তাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান।