সরকার ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সাভারে বিক্ষোভের সময় পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে কয়েকটি স্থানে পুলিশ ও শ্রমিকদের পৃথক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশসহ প্রায় ৩২ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ তিন ব্যক্তি এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সাভারের কয়েকটি স্পটে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। সকালে হেমায়েতপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উলাইল এলাকার আন-লিমা গার্মেন্টসের সামনে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন সুমন মিয়া (২২)। তিনি ওই গার্মেন্টরই একজন কর্মী। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সহকর্মীরা তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একই কারখানার শমেশ নামের একজন শ্রমিক এবং সকালে হেমায়েতপুরের ঘটনায় দুই নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলেও জানান তারা।

সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক বলেন, ‘সুমন মিয়াকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পরই চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেছেন। তার বুকে গুলি লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।এদিকে সাভার থানার পুলিশ নিহত সুমন মিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে বলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা-১ আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা সামিনুর রহমান বলেন, ‘বিকালের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে শুনেছি।এদিকে এনাম মেডিক্যালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি)-এর ইনচার্জ ড. নাসির উদ্দিন বলেন, শমেস, আঁখি বেগম ও রুবিনা বেগম নামে তিন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে এসেছেন।আঁখি বেগম জানান, তিনি গার্মেন্ট কর্মী নন। হেমায়েতপুরে নিজের দোতলা বাসা থেকে সংঘর্ষের ঘটনা দেখছিলেন। সে সময় বাইরে থেকে একটি গুলি তার পেটে গিয়ে লাগে বলেও তিনি জানিয়েছেন।রুবিনা বেগম বলেন, আমি স্ট্যান্ডার্ড গ্র“পের যমুনা গার্মেন্টে কাজ করি। হেমায়েতপুরে সকালে বিক্ষোভের পর গুলিবিদ্ধ হই।

এদিকে, সরকারি মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন ও বৃদ্ধির দাবিতে তিনদিন ধরে রাজধানীর উত্তরা, কালশীতে বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ করে আসছিলেন পোশাক শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও সকাল থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। দুপুরের পর থেকে কয়েক দফায় উত্তরার আজমপুর, দক্ষিণখান এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। যান চলাচলও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর থেকে তারা মিরপুরের কালশী সড়কে অবস্থান নেন। তাদের সরিয়ে দিতে একবার ধাওয়া দেয় পুলিশ। এরপর উত্তরার আজমপুর, দক্ষিণখান এলাকাতেও শ্রমিকরা রাস্তায় অবস্থান নেন।উত্তরা থানা সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টা থেকে উত্তরা ও আবদুল্লাহপুরের সড়কে অবস্থান নেন শ্রমিকরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সোয়া ৩টার দিকে আজমপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সদস্যদের লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করতে দেখা যায়। শ্রমিকরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।তবে সর্বশেষ বিকেল পৌনে ৫টার দিকে পুলিশের ধাওয়ায় আজমপুর ও দক্ষিণখান এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে। শ্রমিকরা সরে যেতে থাকেন। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় অবস্থান করতে দেখা যায়। গত দুই দিনের তুলনায় আজ পুলিশের সংখ্যা অনেক বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ঘটনাস্থলে দাঙ্গা পুলিশ ও সাঁজোয়া যান আনা হয়েছে।দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত শফিকুল গণি সাবু জাগো নিউজকে বলেন, বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করা পোশাক শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছিল। মন্ত্রণালয়েও বৈঠক চলছিল। সব মিলে শ্রমিকদের শান্ত থাকার কথা বলা হলেও তারা জনশ্ঙ্খৃলা বিঘ্ন ঘটিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল।