প্রহসনের নির্বাচন ও ভোট ডাকাতির জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের স্টেডিয়ামে গিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যাদের সঙ্গে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করেছেন, তাদের সঙ্গে তিনি আবার সংলাপে বসবেন ও চায়ের আমন্ত্রণ জানাবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের এজেন্ডা থাকলে আমরা সংলাপে যাবো, নাহলে যাবো না। এটাই ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির সিদ্ধান্ত।

মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দলের আহত এক কর্মীকে দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দুর্বৃত্তদের হামলায় যশোরের যুবদলকর্মী ফয়সালকে দেখতে যান বিএনপির মহাসচিব।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট চুরির’ জন্য ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদককে প্রকাশ্যে মাফ চাওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেন, ওরা (সরকার) এত বড় একটা চুরি করেছে, সেই চুরি সামাল দিতে পারছে না। মাথায় প্রবলেম হচ্ছে। কাদের সাহেবকে গিয়ে বলেন প্রথমে স্টেডিয়ামে গিয়ে জাতির কাছে মাফ চাইতে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে গণভবনে সংলাপে ডাকার খবর দেওয়ার একদিন বাদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তা পাল্টে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা বলায় মঙ্গলবার মির্জা ফখরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সাংবাদিকরা। তার জবাবেই বিএনপি মহাসচিবের এমন প্রতিক্রিয়া আসে।

তিনি বলেন, জাতির সঙ্গে যে ভয়াবহ একটা মিথ্যাচার করেছেন- সেই মিথ্যাচারের জন্য, প্রতারণা করেছেন- সেই প্রতারণার জন্য, জাতিকে বঞ্চিত করেছেন -এটার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) যেন স্টেডিয়ামে গিয়ে মাফ চান। তারপরে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও মত সকলের সঙ্গে আলোচনা করেন, তাহলে একটা পথ তৈরি হবে।

এবারের নির্বাচনে ২৫৭টি আসন পাওয়া আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয়ে টানা তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করেছে। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন।অন্যদিকে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র আটটি আসন। এই ভরাডুবির জন্য বিএনপি ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘কারচুপির’ অভিযোগ এনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

নির্বাচনের আগে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সেই সংলাপ ‘অর্থবহ হয়নি’ বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নতুন নির্বাচনের পথ তৈরি করতে আবারও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিল সরকারকে।

সেই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যেসব দল ও জোটের সাথে সংলাপ হয়েছিল, তাদেরকে আবার চিঠি দিয়ে সংলাপে ডাকবেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)।তবে সেই বক্তব্য পাল্টে সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোনো বিষয় এখন নেই। কেবল শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য’ রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকা হবে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যশোরের যুবদল কর্মী মো. ফয়সাল আলীকে দেখতে গেলে সাংবাদিকরা তাকে সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন।

ভোটের পরদিন ৩১ ডিসেম্বর যশোরে যুবদল কর্মী ফয়সালের ওপর হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীদের দায়ী করে আসছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ঢাকা মেডিকেলের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ফয়সালের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, গোটা দেশ এখন হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই দখলদারি সরকার, যারা জনগণের সমস্ত আমানতকে লুণ্ঠন করে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে। এরপর তারা প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে বিরোধী মতের লোকজনকে খুঁজে খুঁজে বের করে অত্যাচার করছে, খুন করছে, তাদের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট দখল করছে, লুট করছে- একটা চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

ফয়সালের অবস্থা জানাতে গিয়ে ফখরুল বলেন, তাকে ছুরিকাঘাত করেছে কয়েক জায়গায়। চিকিৎসকরা বললেন, প্রায় আট ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া না গেলে তার ক্ষতি হতে পারে। এ রকম অবস্থা সারা বাংলাদেশেই।নির্বাচনের দিন নিহত এক বিএনপি কর্মীর পরিবারকে সান্ত¡না দিতে সোমবার সিলেটের বালাগঞ্জ সফরের কথা তুলে ধরে দলটির মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের দিন কীভাবে সেখানে নেতা-কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, মহিলাদের ওপর গুলি করা হয়েছে, এ বিষয়গুলো জাতির সামনে উঠে আসছে ক্রমশ।

ফখরুলের ভাষায়, আওয়ামী লীগ ‘ফাঁকা মাঠে গোল দেবে’ এবং তা কেউ জানবে না- এরকম একটি নীল নকশা ক্ষমতাসীনরা করেছিল। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ‘অপকীর্তি’ এখন প্রকাশ পেয়ে গেছে।দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে- লজ্জা বলে একটা কথা থাকে তো, সেই লজ্জা-শরমও নেই। বলছে মহাবিজয়। এমন মহাবিজয় যে সারা দেশের মানুষের মুখে হাসি নেই কোথাও। আমি এখন পর্য়ন্ত কোথাও কোনো হাসি দেখিনি ফখরুল বলেন, মায়ের বুকের ছোট ছেলে হারিয়ে গেলে যেরকম একটা কষ্ট হয়, সেরকম জনগণের বুকের মধ্যে একটা কষ্ট যে, আমার অধিকার আমি প্রয়োগ করতে পারি নাই’।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, যশোর সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী আজমসহ স্থানীয় নেতারা এ সময় মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন ।