গ্যাটকো দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়নি। তবে খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য আসামিদের পক্ষে চার্জ গঠনের জন্য সময়ের আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর করেন বিচারক। আগামী ২৪ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন তিনি।

রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজারের আদালতে আজ বুধবার (১৬ জানুয়ারি) খালেদা জিয়া ও অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে গত ১০ জানুয়ারি প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট দেন বিচারক। তবে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আজ বিচারক এজলাসে আসেন ১২টা ৪৫ মিনিটে। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল শুনানি শুরু করে বলেন, ‘মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য আছে। তবে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়নি। বলা হয়েছে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই উনার অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠন শুনানির আবেদন করছি। যেহেতু অন্য আসামিরা আদালতে আছেন, তাই তাদের বিষয়ে অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু করা হোক।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। তিনি বলেন, যেহেতু খালেদা জিয়া আদালতে হাজির নাই, সেহেতু আইন অনুযায়ী অভিযোগ গঠন শুনানি চলে না। তাই খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন শুনানির আবেদন করছি।

আসামি পক্ষের অন্যান্য আইনজীবীরাও অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য সময় চান। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক সব আসামির উপস্থিতিতে শুনানির জন্য ২৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।উল্লেখ্য, জরুরি বিধিমালা সংযুক্ত এ মামলার অভিযোগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। রিট আবেদনের কারণে প্রায় ৮ বছর নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রিট খারিজ করে উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দুই মাসের মধ্যে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ৫ এপ্রিল আত্মসমর্পন করে জামিন পান খালেদা জিয়া।

এর আগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০০৮ সালের ১৩ মে জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জহিরুল হুদা। ২৪ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভুইয়া ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রাহমান কোকো মারা গেছে এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি হয়েছে। মামলাটিতে বর্তমান আসামির সংখ্যা ২০ জন।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের (প্রয়াত) স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং একেএম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লি.(গ্যাটকো) এর পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রাক্তন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন। আসামিদের মধ্যে সম্প্রতি এম কে আনোয়ার মারা গেছেন।