একদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার। অন্যদিকে সমাবেশগামী বিপুল যাত্রী টানতে ব্যস্ত ঢাকার গণপরিবহনগুলো। এর জন্যই ফাঁকে রাজধানীর সড়কে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা একেবারেই কম ছিল। জরুরি কাজে যারা বেরিয়েছিলেন তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বাসের অপেক্ষায় দেখা গেছে যাত্রীদের। বাস সংকট থাকায় দুপুর ১২টার পর থেকে রাজধানীর মূল সড়কগুলোতে যানজট ছিল কম ।

পরিবহন মালিক শ্রমিকরাও জনসভায় যোগ দেন বলে জানা গেছে। তবে, বিষয়টি অস্বীকার করে বাস মালিকদের একজন নেতা জানান, চালক সংকট হবে না। কারণ দুই শিফটে বাস চলে। এক বাসের একাধিক চালক থাকেন।

সরেজমিন বিভিন্ন সড়কে বাসের চলাচল তুলনামূলক কম দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রগতি স্মরণি সড়কের নতুন বাজারে বাসের জন্য অপেক্ষায় শামসুজ্জামান। প্রতিদিন এখান গ্রীণ ঢাকা এসি বাসে মতিঝিল যান তিনি। ঘন্টাখানেক পরও এই বাসের দেখা পাননি তিনি। এ বিষয়ে গ্রীণ ঢাকা বাস মালিক মন্টু মিয়া সারাবাংলাকে জানান, সমাবেশে যাত্রী নিয়ে যেতে তার বেশ কিছু গাড়ি ব্যবহার হয়েছে। এ কারণে সড়কে বাসের কিছুটা সংকট আছে। তার প্রায় ৩০ টি এসি বাস জনসভার যাত্রী নিয়ে যাবে। তবে জনসভা শেষে এগুলো নিয়মিত ট্রিপ দেবে।ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা সামদানী খন্দকার জানান, সায়েদাবাদ, ফুলবাড়ি, মহাখালী টার্মিনালের হাজার হাজার মালিক চালক ও শ্রমিকরা সমাবেশে মিছিল নিয়ে যোগ দেন।

যান চলাচল নিয়ে পুলিশের নির্দেশনায় বলা হয়, শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত সড়কে সাধারণের চলাচলের জন্য বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্তরের দিকের সড়কও। মূলত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকের সড়কে ব্যারিকেড বসিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় সমাবেশের কারণে বেশ কিছু রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করা ছিল। ফলে শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন থমকে আছে। গণপরিবহনের সংখ্যাও কম। সরকারি ছুটির দিন হলেও বেলা ১১টার দিকে ফার্মগেট থেকে কাওরান বাজার সিগন্যাল পার হতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লেগে যায়।ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঢাকা শহরে এ ধরনের উৎসব উদযাপনে ভোগান্তিতে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ, বাণিজ্য মেলার কারণে যানজটে বসে থাকতে হয় রোকেয়া সরণিতে,তার ওপর আজকের এই আয়োজন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভ করায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিজয় সমাবেশের আয়োজন করায় রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এ দুর্ভোগ বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুর রোডে সকাল থেকেই যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সোহরাওয়ার্দী যাওয়ার প্রবেশ পথগুলোর আশেপাশের সড়কে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। ইস্কাটন থেকে বাংলামোটরের দিকে বের হতে ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। বাংলামোটর ফ্লাইওভারে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

রিকশাচালক রমিজ বলেন, ওয়ারলেস গেট থেকে এসে ইস্কাটনে আটকে আছি। যাত্রী অর্ধেক ভাড়া দিয়ে নেমে হাঁটা দিয়েছেন।

আল আমিন নামে আরেক যাত্রী বলেন, এই এলাকায় এমনিতেই জ্যাম থাকে। আজকে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।সকালে ফার্মগেটে আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে একটা বিআরটিসি বাসে উঠতে পেরেছেন শাহানা আখতার। তিনি বলেন, ‘কোন বাস নেই। যেগুলো আছে গেটলক হয়ে আসছে, উঠতে পারিনি। বাস কেন নাই তার কোনও ঘোষণাও নেই। আমরা রাজধানীবাসী যেন এ ধরনের হয়রানিতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।’

রোকেয়া সরণির জ্যাম ঠেলে কাওরান বাজারের দিকে আসছেন রহমত মিয়া। তিনি বলেন, ‘রোকেয়া সরণিতে মেট্রোরেলের কাজ আর বাণিজ্য মেলার জন্য সবসময় জ্যাম লেগে থাকে। তারওপর আজকে এরকম পরিস্থিতি। দিনশেষে যার যার জায়গায় পৌঁছানোই তো এখন মুশকিল মনে হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, শনিবার হওয়াতে ভোগান্তি কম, কিন্তু গণপরিবহন না থাকার বিষয়টি পূর্বঘোষণা থাকা উচিত।

কাওরান বাজারের সোনারগাঁও ক্রসিং থেকে যানবাহনের ডাইভারশন করে দেওয়া হয়েছে। বাংলামোটর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক বন্ধ রাখা ছিল। সড়কের দুইপাশে পথচারীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করেছে। এছাড়াও উৎসবে যোগ দিতে লোকজন মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিগে অগ্রসর হয় । ৩০ ডিসেম্বর তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের রেকর্ড করলেও বিজয় মিছিল না করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিজয় আনন্দ থেকে নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করতে চায় না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় সমাবেশে করার ঘোষণা দেয় দলটি।