দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসকে সমাজের কালো ব্যাধি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা এসব কালো ব্যাধি’ থেকে সমাজকে মুক্ত করবো। তার জন্য যা যা করা দরকার, সেটা আমাদের করতে হবে।

রোববার (২০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, দেশকে উন্নত করতে চাইলে এসব মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতির হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজে যে সমস্যাগুলো আছে, তার মধ্যে দুর্নীতি কালো ব্যাধির মতো ছড়িয়ে আছে। দুর্নীতিই একটা কালো ব্যাধি, এটা সমাজের অগ্রগতি যথেষ্ট ব্যাহত করে। সেক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

এ সময় তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপক হারে বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা তুলে ধরেন।

সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মাদক কারবারিদের খুঁজে বের করতে এবং মাদক নির্মূলে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। সরকারপ্রধান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সমাজকে মাদকমুক্ত করা, মাদক কারা আনে, তৈরি করে, পাচারকারী, কারা সরবরাহ করে, কারা মাদক সেবন করে বা দেয় তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যারা মাদক সেবন করে শুধু তারাই নয়, যারা মাদক আনে, তৈরি করে, সাপ্লাই দেয়, তাদেরও ধরতে হবে।

সুস্থ জীবনে ফিরতে আগ্রহীদের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা সুস্থ হয়ে সমাজে ফিরতে চাইবে তাদের সেই সুযোগ করে দিতে হবে। কোনও পরিবারে মাদকাসক্ত সন্তান থাকলে সেই পরিবারের কী কষ্ট, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি।

নতুন নতুন সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রতিটি বাহিনীকে মাদকবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার নির্দেশনাও দেন।

মাদকের বিরুদ্ধে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারলে এটি নির্মূল সহজ হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণকে সম্পৃক্ত করার সুফলের কথা তুলে ধরেন।

এছাড়া, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তে প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও বেশি দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা অপরাধী তারা হয়তো আরও বেশি ভালো প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সেখানে আমাদের যারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করবেন, তাদের আরও বেশি উন্নতমানের হওয়া দরকার। যাতে সঙ্গে সঙ্গে অপরাধী শনাক্ত করা, গ্রেফতার করা এবং ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সেদিক থেকে আমরা অবশ্য যথেষ্ট অগ্রগামী আছি।

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ উভয় পক্ষই পায়। এটা হলো বাস্তবতা। বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে অপরাধীরা যেমন সুযোগ নেয়, সেই ক্ষেত্রে যারা নিয়ন্ত্রণ করে—তাদেরও ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। এই মন্ত্রণালয় খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারাবন্দিদের প্রশিক্ষণ, তাদের দিয়ে কিছু উৎপাদন করানো এবং সেগুলো বাজারজাত করে লভ্যাংশটা যারা কাজ করবে তাদের জন্য রেখে দেওয়া, যা তাদের পরিবার নিয়ে যাবে; অথবা যখন মুক্তি পাবে সেই টাকা দিয়ে সে যেন একটা কর্মসংস্থান করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই।

অপরাধীদের অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধীরা অপরাধে সম্পৃক্ত হয় কেন সেটা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে শুধু অ্যাকশন নিলেই তারা ভালো হয়ে যাবে, তা নয়। বরং তাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।

ভবিষ্যতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে টানা তিনবার ও বাংলাদেশের ইতিহাসে চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কী কী করেছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না, বরং ভবিষ্যতে মানুষকে আরও বেশি সেবা দেওয়ার জন্য, মানুষের করণীয় বিষয় নিয়ে আরও বেশি আলোচনা করতে চাই।’

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, সেটা ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে খুব স্বাভাবিক মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশি জনগণের আস্থাভাজন হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা জনগণের নিরাপত্তা দেবে, তাদের জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আস্থা-বিশ্বাসটা তখনই অর্জন করতে পারবে, যখন তারা সঠিক সেবাটা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।

মিলিটারি ডিক্টেটররা বাংলাদেশে সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মাদকের গোড়াপত্তন করেছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই কোনও দেশে মিলিটারি ডিক্টেটররা আসে তারা কিন্তু সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতিটাকে তারা নীতি হিসেবে নেয়। মাদককে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেয়।

জনবল সংকটে কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রজেক্টগুলো যখন তৈরি করা হয়, তখনই কত জনবল রাজস্ব খাতে প্রয়োজন সঙ্গে সঙ্গে সেটা উল্লেখ করে দেওয়া দরকার, যেন আমরা প্রজেক্ট পাস করার সঙ্গে সঙ্গে জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে পারি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংস্থার প্রধানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।