গাজীপুরে স্বামী ও তার সহযোগিদের হাতে নিহত গার্মেন্টস কর্মী আফরোজা খাতুনের ৫বছরের শিশু সন্তান সাথীর পড়াশোনা ও ভরণ পোষণসহ সকল দায়িত্ব নিয়েছে র‌্যাব। রবিবার র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক অসহায় ওই শিশু সাথীর বর্তমান পড়াশোনা ও পূনর্বাসন বাবদ ২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন। এ ছাড়াও শিশুটিকে দেখা শোনার জন্য তার দিনমজুর মামাকে চাকুরির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল সরোয়ার-বিন-কাশেম ও নিহতের স্বজনরা জানান, পারিবারিক কলহের জেরে গত ৩ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভাওরাইদ উত্তরপাড়া এলাকার গার্মেন্টস কর্মী আফরোজা বেগমকে (২৬) তার স্বামী শাহজাহান মিয়া শ্বাসরোধ হত্যা করে। পরে নিহতের লাশ বাড়ীর পার্শ্ববর্তী সেপটিক ট্যাংকে লাশ ফেলে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে গুম করার চেষ্টা করে। লাশ গুম করার সময় ঘটনাটি নিহতের দু’স্বজন দেখে ফেলে। এ বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে নিহতের স্বামী পালিয়ে যায়। পরে ৪ জানুয়ারি ভোর রাতে ওই সেপটিক ট্যাংক থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ৮দিন পর ১১ জানুয়ারি র‌্যাব-১ এর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে দুই সহযোগিসহ নিহতের স্বামী শাহজাহান মিয়াকে (২৮) গ্রেফতার করে।

এদিকে আফরোজা ও শাহজাহান দম্পতির সাথী নামের ৫ বছরের এক শিশু সন্তান রয়েছে। মা-বাবার অবর্তমানে ওই শিশুটি অসহায় হয়ে পড়ে। মায়ের খুনের পর অসহায় শিশু সাথীকে তার মামা আনোয়ার হোসেন নিজের কাছে নিয়ে যান। আনোয়ার হোসেন পেশায় দিনমজুর এবং তার ঘরেও দুই সন্তান রয়েছে। অভাব অনটনের সংসারের ব্যয় বহন করা আনোয়ার হোসেনের কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠে। বিষয়টি র‌্যাব-১’র অধিনায়কের নজরে আসে। পরে অসহায় শিশু সাথীর ভবিষ্যত্বের কথা চিন্তা করে তার পড়াশোনা ও ভরণ পোষণসহ সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেন র‌্যাব-১’র অধিনায়ক। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১’র অধিনায়ক রবিবার শিশু সাথীর বর্তমান পড়াশোনা ও পূনর্বাসন বাবদ এক লাখ টাকা ও সদর দপ্তর হতে আরো এক লাখ টাকাসহ মোট দুই লাখ টাকার চেক প্রদান করেন। এ ছাড়াও শিশুটিকে দেখা শোনার জন্য তার দিনমজুর মামা আনোয়ার হোসেনকে চাকুরির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।

নিহতের মামা একামত হোসেনসহ স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৮ বছর আগে একই কারখানায় চাকুরি করার সুবাদে গাইবান্ধা সদর উপজেলার জিকাবাড়ি এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ের সঙ্গে জামালপুরের সানন্দবাড়ির মন্ডলপাড়া এলাকার শাহজাহান মিয়ার পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে উভয়ের পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর আফরোজা তার স্বামী সন্তান নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভাওরাইদ উত্তরপাড়া এলাকার মুকুল মিয়ার বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। আফরোজা স্থানীয় সালনা এলাকার শ্যামলী পোশাক কারখানার শ্রমিক। আর তার স্বামী শাহজাহান জোলারপাড় এলাকার একটি স্টিল মিলে চাকরি করেন। আফরোজার বাবা বিল্লাল হোসেন গাজীপুরের ভাওরাইদ উত্তরপাড়া এলাকায় ক্রয়কৃত জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে স্বপরিবারে থাকেন।