বহুল আলোচিত দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প স্বপ্নের পদ্মাসেতুর জাজিরা ৬ষ্ঠ স্প্যান বসনোর মধ্যদিয়ে স্বপ্ন থেকে বাস্তবতার দিকে আরো একধাপ এগিয়ে গেল স্বপ্নের পদ্মাসেতু। আজ বুধবার সকাল পৌনে ১০ টায় শক্তিশালী ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই এর মাধ্যমে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের ৬ষ্ঠ স্প্যানটি শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় ৩৬ ও ৩৭ নং পিলারের ওপর বসানোর মধ্যদিয়ে সেতু রূপ নিল ৯০০ মিটারে।

এর আগে জাজিরা প্রান্তে চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে নদীতে এবং পঞ্চম স্প্যানটি বসেছে সেতুর দক্ষিনাংশের নদীর শেষ প্রান্তে। মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে ১ টি স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে এখন পদ্মা সেতর দুই প্রান্তেু দৃশ্যমান হলো ১০৫০ মিটারে।

সেতু বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের মধ্যে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান, ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের উপর দ্বিতীয় স্প্যান, ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের উপর তৃতীয় স্প্যান এবং ১৩ মে ৪০, ৪১ নম্বর পিলারে উপর বসানো হয় চতুর্থ স্প্যান এবং সর্বশেষ গত ২৯ জুন ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়। আজ বুধবার সকাল পৌনে ১০ টায় জাজিরা প্রান্তে ৬ষ্ঠ স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হলো। এর আগে মুন্সগঞ্জ প্রান্তে একটি স্প্যান বসানো হয়। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুতে ৪২টি খুঁটি থাকবে। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারের নিচে ৬টি করে পাইল বসানো হচ্ছে। এ সেতুতে মোট ২৯৪টি পাইল বসানো হবে।

এ পাইল গুলো ৯৫ মিটার থেকে ১২০ মিটার মাটির গভীরে বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৩৮ টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি পিলার ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আরও ১৭টি পিলার দৃশ্যমান হবে বলে প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন। জাজিরা-মাওয়া দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দ্বিতল বিশিষ্ট এই সেতুর নিচ দিয়ে চলবে রেল গাড়ি আর উপর দিয়ে যাতায়াত করবে যান ও পন্যবাহি পরিবহন। পানির স্তর থেকে ৬০ ফিট উঁচু হবে মূল সেতু। জাজিরা প্রান্তে বসানো স্প্যানগুলোর মধ্যে দুটি স্প্যানে রেলের স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি স্প্যানে স্প্যানগুলোতে স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। সেতুর প্রস্থ্য হবে ৭২ ফিট বা ৪ লেন। চার হাজারেরও বেশী দেশী বিদেশী জনবল দিন-রাত করে সেতু নির্মানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত মূল সেতুর ৭৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেও সেতু বিভাগ সূত্রে জানাগেছে।

সেতু বিভাগ সূত্র থেকে জানাগেছে, গতকাল গতকাল মঙ্গলবার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৬ষ্ঠ স্প্যানটি তিয়ান-ই ক্রেন মুন্সীগঞ্জের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে জাজিরা প্রান্তে নেয়া হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা আর প্রস্তুতি শেষে আজ বুধবার পৌনে ১০টার দিকে ক্রেন দিয়ে ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের ওপরে স্প্যানটি স্থাপন করা হয় এবং শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের এটিই শেষ স্প্যান। মাওয়া প্রান্তে আরও স্প্যান স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এভাবে আরো ৩৫টি স্প্যান সংযুক্ত করেই সম্পন্ন হবে স্পপ্নের পদ্মা সেতু। ৬ষ্ঠ স্প্যানটি বসানোর পর পদ্মাপাড়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভাবে উৎসাহ উদ্দিপনা লক্ষ্য করা গেছে।

আর এ সেতুর কাজ শেষ হলে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে। দেশের অর্থনৈতিতে নুতন মাত্রা যোগ হবে। পদ্মাসেতুর দু’পাড়ে গড়ে উঠবে বিশ্বমানের শহর। কল কারখানায় ভরে উঠবে এ এলাকা। শ্রমজীবি মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। সর্বক্ষেত্রে ব্যবসা বানিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে সেতুর জাজিরা প্রান্তে। ইতি মধ্যে এপ্রোজ সড়ক দিয়ে গাড়ি চলা চল শুরু করেছে । টোল প্লাজার নির্মান কাজ শেষ করেছে সেতু বিভাগ। পদ্মা সেতুর দুপারে দিন রাত কাজ চলছে।

জাজিরা পূর্বনাওডোবা এলাকার মোখলেছুর রহমান মাদবর বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে আমাদের বাপ দাদার জমিজমা দিয়ে সব হারিয়ে মনে করেছিলাম সেতু করার নামে আমাদের জমিজমা নিয়ে গেল। এখন যত স্প্যান বসানো হচ্ছে ততই মনের জোড় বেরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই এ সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পারবো। মামননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দক্ষিনাঞ্চলের সকল মানুষ মিলে একত্রিত ভাবে ধন্যবাদ জানালেও ধন্যবাদ দেয়া শেষ হবে না।

সেতু বিভাগের প্রকৌশলী মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৬টি স্পেন বসানো হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে বসানো হয়ে আরো একটি স্পেন। এনিয়ে পদ্মা সেতুর সাতটি স্পেন বসানো হলো। আরো স্প্যান বসানোর কাজ চলছে। আমরা আশাকরছি এ বছরের মধ্যে সবকটি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হবে।