বিল্ডিং ট্রাস্ট বিল্ডিং গ্রোথ, বিল্ডিং টীম বিল্ডিং ইউনিটি। ওপরের ছবিটি তেমন একটি মেসেজ বহন করছে। এরা স্টকহোমের টিনএজ টেনিস খেলোয়াড়। লেখা পড়া করছে। এদের টিনএজ লাইফের মূল উদ্দেশ্য খেলাধুলোর সঙ্গে পড়াশোনা করা এবং দৃড়তার সঙ্গে পড়াশোনা ও খেলাধুলার সাফল্যের সমন্বয় ঘটানো।  ছবিতে বেশ পরিস্কার তাদের প্রোমিজিং মেসেজ সঙ্গে সব টিনএজের মাঝে যেন ভ্রাতৃত্ববোধ ও একত্বাবোধ গড়ে তোলা হয়। একে অপরের মাঝে ভেদাভেদ না খুঁজে পৃথকভাবে বা একটি টীম হিসাবে। এদের টিনএজ জীবনে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তা সত্বেও উন্নত মানের জীবন ব্যবস্থার কারণে এরা দৃড়তার সঙ্গে বিশ্বাস করছে এদের কাজের ওপর মোটিভেটেড এবং ডেডিকেটেড হয়ে। ছবিতে রয়েছে আমার মেয়ে জেসিকাও। এরা সুইডেনের টিনএজ কলেজ স্টুডেন্ট। এরাও ১০০% শিওর না এদের জীবনের গোলস এ্যান্ড ওবজেকটিভস সম্পর্কে। তবে এদের চারিপাশে জড়িয়ে এবং ছড়িয়ে রয়েছে পসিবিলিটিস এবং এদের পারিপার্শ্বিকতা এবং সামাজিকতা ধরে রেখেছে এদের প্রাণবন্ত এ্যাটমোসফেয়ার।

তুলে ধরব আজ এদের দৈনিন্দন জীনের অংশ বিশেষ।সকালে ঘুম থেকে উঠে তাদের ব্রেকফাস্ট শেষ করে কলেজে চলে গেল। সেখানে বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা গ্রহণ করা থেকে লাঞ্চ টি/কফি ব্রেক স্কুলেই হয়ে থাকে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী স্কুলের বা কলেজের লেখাপড়া বা হোম ওয়ার্ক যা থাকে তা শিক্ষার্থীরা কলেজ শেষে গ্রুপ ওয়াইজ বা নিজের দায়ীত্বে লাইব্রেরীতেই সেরে নেয়। অনেকে বাসাতে বা সরাসরি কেউ যদি এক্সট্রা কাজ করে সেখানে গিয়ে কাজ সেরে বাড়িতে ফেরে। যারা স্পোর্টসের সাথে জড়িত, তারা চলে যায় তাদের স্পোর্টস ক্লাবে বা একাডেমীতে। প্রত্যেক স্পোর্টস ক্লাব বা একাডেমীতে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে যেমন ক্যাফে, শাওয়ার, ফিটনেস, স্টাডি রুম বলতে গেলে যা দরকার সবই রয়েছে। বেশির ভাগ সেখানেই তাদের গোসলের কাজ একবারে সেরে বাড়িতে আসে। বাসাতে এসে এরা ডিনার সেরে টিভি, টেলিফোন, কথপোকথন বা ফ্যামেলি টাইমের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে পরে রাত দশ থেকে এগারোটার মধ্যে বিছনাতে এবং ঘুম। উইকেন্ডে কেউ এক্সট্রা কাজ করে বা যারা স্পোর্টসের সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ সময় এদের টুর্নামেন্ট থাকে তাই তারা পুরো সময় ব্যস্ত তাদের খেলাধুলো নিয়ে। মাঝেমধ্যে এদের নাচ-গানের ব্যবস্থা থাকে বা বন্ধু-বান্ধবীর জন্মদীনের পার্টি থাকে সেখানে তারা সময় দিয়ে থাকে। এদের পড়াশোনার সময়ে সরকারি ভাবে মাসে একটি হাত খরচ এবং যোগাযোগ বা কমুউনিকেশনের জন্য মাসিক টিকিট দেওয়া হয়। এদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যের যত্নের ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুল বা কলেজের বই পুস্তকেরও ফ্রি ব্যবস্হা রয়েছে। প্রতি টার্মিনে মিনিমাম রেজাল্ট করতে হয় পকেট খরচ বা স্টাইপেন্ড পেতে। প্রতি টার্মে শিক্ষার্থী, বাবা-মা এবং শিক্ষকদের মধ্যে ফলোআপ মিটিং হয়ে থাকে যেখানে শিক্ষার্থীর কারেন্ট পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর গুরত্ব আরোপ করা হয়। এই ফলোআপ মিটিংএর মূল লক্ষ ফিড ব্যাক দেওয়া এবং গ্রহন করা। কলেজ জীবনের শিক্ষার ওপর নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি সময়টি , তাই এই সময়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে।

একই সঙ্গে টিনএজ ছেড়ে একজন সচেতন এবং দায়িত্ববান নাগরীক হিসাবে নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক ভাবে সামঞ্জস্য করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া, সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। হটাৎ এতগুল দায়িত্ব একই সঙ্গে এবং এই বয়সে জানিনে এমনটি করে আমরা কখনও ভেবেছি কি? জানিনে বাংলাদেশে এই টিনএজের সময়কে কি ভাবে দেখা হয়? কি ভাবে তাদেরকে নিয়ে ভাবা হয়? বা আদৌ ভাবা হয় কিনা! বেশ সহজ করে আমরা বলে থাকি নতুন প্রজন্মদের এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে বা নতুন করে ভাবতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তাদেরকে সেই ভাবে যদি গড়ে তুলতে না পারি তাহলে ঠিক হবে কি তেমনটি আশা করা? যত সহজ তুলনা করা অন্য একটি দেশ বা জাতির সঙ্গে বাস্তবে তার প্রতিফলণ ঘটান কি ততটা সম্ভব যদি একই ধরণের সুযোগ সুবিধা না থাকে? শুধু স্কুলে বা কলেজে গেলেই কি হয়ে গেল? আছে কি তেমনটি সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশের টিনএজদের যা আমি বর্ননা করেছি সুইডেনের টিনএজদের জীবনের সম্বন্ধে? আমার বর্নানায় শুধু সুইডেনের বড় লোকের ছেলে-মেয়ের কথা নয়, এখানে সবার জন্য একই ব্যবস্থা রয়েছে। তবে হ্যাঁ ব্রেকফাস্ট, ডিনার বা ছুটিতে বড়লোকের ছেলে-মেয়েরা হয়তবা কিছুটা এক্সট্রা বিলাসিতা করে থাকে যা খুবই বিরল।

পাঠক আজ এসব কথা বলার কারণ একটাই তা হোল আমরা বেশ জোর দিয়ে বলতে শুরু করেছি নতুন প্রজন্মদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে। ভাবতে শুরু করেছি বাংলাকে সোনার বাংলা করতে হবে। খুব ভালো কথা। এখন তাহলে নতুন প্রজন্মদেরকে সুযোগ সুবিধাও দিতে হবে যাতে করে তারাও সুশিক্ষার সাথে খেলাধুলোর সমন্বয় ঘটাতে পারে। সুযোগ দিতে হবে তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তরিত করার। নিরাপত্তা দিতে হবে তাদের দৈনিন্দন জীবনের, যাতে করে তারা তাদের কলেজ শেষে বা খেলাধুলোর শেষে বাবা-মার কোলে ফিরে আসে কোন রকম সমস্যা ছাড়া। বাবা-মা যেন প্রতিদিনই ডেড বডি বাড়িতে আসতে পারে বা ধর্ষণ হতে পারে এমনটি চিন্তার রাজ্যে বসবাস না করে। এ দায়িত্ব কার? কার দায়িত্ব নাগরীকের নিরাপত্তা ও বাঁক স্বাধীনতা এক্ষুন্ন রাখা? রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের এডমিনিষ্ট্রেশনের। কবে করবে তারা সে দায়িত্ব পালন এবং কবে দেখব আমাদের টিনএজদের জীবনের নিশ্চয়তা?

আরেকটি বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে তা হোল বাংলাদেশের সবাই যেন তার মনের মাঝে এবং সমাজের খাতায় মানুষ নামে স্বীকৃতি লাভ করতে পারে। আর কতদিন মুচি, মেথর, কৃষক, চামার, মাঝি, হাজি, জমিদার, দফাদার, পুলিশ, ভিখারী, কেরানী, ডিসি,এসপি, এমপি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রীর ছেলে-মেয়ে হয়ে সমাজে চলতে হবে? সময় কি এখনও আসেনি স্বাধীন বাংলায় মানুষ হয়ে পরিচিত হবার? সময় কি এখনও আসেনি শুধু প্রশাসন নয় জনগণই ক্ষমতার উৎস তার প্রমাণ দেখানোর? শুধু কথায় নয় কাজে প্রমাণ করতে হবে। সময় কি এখনও আসেনি সঠিক সময়ের?  ৪৭ বছর কি যথেস্ট সময় নয় এমনটি পরিবর্তন আনার জন্য? প্রিয় দেশ বাসি যদি কাল থেকে আমাদের চিন্তায় এমনটি কর্মের স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করি তাহলে বাস্তবে রুপ দিতে কয়েক বছর লেগে যাবে যদি তা না করি তবে ১০০ বছর পার হয়ে যাবে আমরা যেমন আছি তেমন থাকব। নতুন রঙের ছোঁয়ায় হৃদয় রাঙ্গীয়ে, আলোর জোয়ারে খুশির বাঁধ ভেঙে এসো বাংলাকে গড়ি। আমাদের সব পরিচয় ভেঙ্গে একটি পরিচয় সৃষ্টি করি “আমরা বাংলাদেশি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।

রহমান মৃধা, দূরপরবাস সুইডেন থেকে।