বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নিতে হুঁশিয়ার করলেন তাদের ২০ দলীয় জোট শরিক এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ।তা করলে বিএনপি বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে লেবার পার্টির উদ্যোগে জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অলি এসব কথা বলেন।একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলার পর বিএনপি বলেছে, তাদের দল থেকে বিজয়ীরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন নাতবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও একই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক আলোচনা সভায় ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক অলি বলেন, এই সরকার যে নির্বাচন করেছে, সেটাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা আশা করব, বিএনপির যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা জাতির সাথে প্রতারণা করবে না, বেঈমানি করবে না, সংসদে যাবেন না।সংসদে যদি যায়, আমরা মনে করব তারা (বিএনপি) জাতির সাথে প্রতারণা করেছে। আমরা যারা নির্বাচন করেছি, তারা জেলে গেছে, যারা মেহনত করেছে, তাদের সাথে প্রতারণা করেছে।

এই নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছে মাত্র ছয়টি আসন। এছাড়া তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গণফোরামের দুটি আসনে জিতেছে। অলি আহমদসহ বিএনপি জোটের আর কোনো নেতা জিততে পারেননি।

অলি ‘ভোট ডাকাতি’ অভিযোগ তুলে বলেন, এটা জঘন্যতম নির্বাচন। হাজার বছর এটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। এই কলঙ্ক থেকে আওয়ামী লীগ কখনও মুক্ত হতে পারবে না।প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। যেটা ভুল হয়েছে, সেটা শুধরানোর ব্যবস্থা নিন, প্রয়োজনে পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। না হলে দেশ অরাজকতার দিকে ধাবিত হবে, রক্তপাত বন্ধ করা সম্ভব হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে এলডিপি সভাপতি বলেন, “একদিকে আপনারা ঐক্যের কথা বলবেন, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত বিএনপিকে গালি দেন, বিএনপি ভেঙে যাচ্ছে, বিএনপি ছিঁড়ে যাচ্ছে ৃ.জাতীয় ঐক্য যদি চান, তাহলে সকল দলের নেতাদের সাথে বসে কীভাবে জাতীয় ঐক্য হবে এই আলোচনা করতে অসুবিধা কোথায়? আমরা কি দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছি, আমরা কী জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করছি?আমরা মুক্তিযোদ্ধা। এদেশের জন্য জীবন দিতে গিয়েছিলাম। আপনাদের দলে ক‘জন আছে এরকম জীবন দিতে গিয়েছিল?”দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানও লোক দেখানো বলে মনে করেন সাবেক মন্ত্রী অলি আহমদ।এবার যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, যাদের সম্পদ কয়েক শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাদেরকে নোটিস দেওয়া উচিৎ, এই সম্পদ কীভাবে বাড়ল? শুধু কথায় দুর্নীতি দমন বলবেন, জিরো টলারেন্স বলবেন আর কর্মকা-ে সেটা হবে না, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে এক সময়ের বিএনপি নেতা অলি বলেন, ঘরে বসে বক্তব্য রেখে তার মুক্তি হবে না। আমি জানি না, বিএনপি কী করবে?তবে আমরা ছোট দল, আমরা তাদের (বিএনপি) সাথে থেকে সাহায্য-সহযোগিতার পরামর্শ দিতে পারব। কিন্তু শক্তি জোগান দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা অনেক দুর্নীতিবাজকে মুক্তি দিয়েছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, যিনি প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, যিনি সেনা প্রধান ছিলেন, যিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তিনি নিজেও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেটা বিবেচনায় নিয়ে, তার বয়স বিবেচনায় নিয়ে আমরা আশা করব সরকার অনতিবিলম্বে তাকে মুক্তি দেবে।নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের পর কেন কর্মসূচি দেওয়া গেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ২০ দলীয় জোট শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।তিনি বলেন, ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিতে আমাদের নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে। কেন আমরা একটা কালো পতাকা প্রদর্শন করতে পারলাম না, কেন একটা মানববন্ধন করতে পারলাম না, কেন একটা স্মারকলিপি প্রদান করতে পারলাম না?আমরা এখন শুধু এলাকায় এলাকায় কবরস্থান খুঁজে বেড়াচ্ছি, কোথায় গিয়ে আমরা কবর জিয়ারত করব, কবর জিয়ারতের কবে শেষ হবে আমরা জানি না।

কামাল হোসেনদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়া ভুল ছিল বলে মনে করেন ইরান।তিনি বলেন, আমরা জোট করেছি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে। আমরা অন্য কোনো নেতার সাথে জোট করি না। দেশনেত্রী যতদিন পর্যন্ত আমাদের বাদ না দেবেন, ততক্ষন আমরা জোটে আছি। ২০ দলীয় জোটের বাইরে অন্য কোনো জোটের প্রয়োজন ছিল বলে আমরা মনে করি না।আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বক্তব্য রাখেন।