ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউন আবাসন প্রকল্পের উত্তর পাশে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা এলাকায় থাকা ২২টি আবাসন কোম্পানির জলাশয় দখল ও ভরাট কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার এ আদেশ দেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে দুই মাসের মধ্যে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ওই এলাকায় ২২টি আবাসন কোম্পানির জলাশয়, পুকুর, নিচু ভূমি ভরাট ও দখল বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২৪ জানুয়ারি আবেদনটি করে। আজ ওই আবেদনের শুনানি হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পূরবী সাহা।

রিট আবেদন থেকে জানা যায়, ২২টি আবাসন কোম্পানি হচ্ছে-ইউনাইটেড পূর্বাচল ল্যান্ডস লিমিটেড, এজি প্রপার্টিজ লিমিটেড, নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড, নীলাচল হাউজিং লিমিটেড, বাগান বিলাস, রূপায়ণ ল্যান্ডস লিমিটেড, আদর্শ আইডিয়াল লিমিটেড, তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড, দা মেট্রোপলিটন ক্রিশ্চিয়ান কো-অপারেটিভ হাউজিং লিমিটেড, গ্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, নর্থসাউথ হাউজিং লিমিটেড, মঞ্জিল হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, শিকদার রয়েল সিটি লিমিটেড, কপোতাক্ষ গ্রীন সিটি, ডিভাইন হোল্ডিংস লিমিটেড, শতাব্দী হাউজিং লিমিটেড, স্বর্ণ ছায়া রিয়েল এস্টেট, ভিশন ২১ ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, ওশান হ্যাভেন লিমিটেড, এস এফ এল চন্দ্রিমা লিমিটেড ও ফেয়ার ডিল শিপিং লিমিটেড।

আদেশের বিষয়টি জানিয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের বিধান অনুসারে কোনো এলাকার জলাভূমি, জলাশয়, পুকুর দখল ও ভরাট সম্পূর্ণ নিষেধ। এরপরও কালিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে জলাশয়, জলাভূমি, নিচু ভূমি ও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি সাইনবোর্ড টানিয়ে মানুষকে প্রতারিত করছে। ওই ২২টি আবাসন কোম্পানি ইতিমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় মাটি ভরাট অব্যাহত রেখেছে, ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে-এসব যুক্তিতে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। আদালত ২২ আবাসন কোম্পানির দখল ও ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে জানিয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিকে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান এই আইনজীবী।

পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা এলাকায় ১৬টি আবাসন কোম্পানির জলাশয়, পুকুর, নিচু ভূমি ভরাট ও দখল এবং বিভিন্ন কোম্পানির সাইনবোর্ড স্থাপন বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে গত ২১ অক্টোবর এইচআরপিবি একটি রিট করে। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১২ নভেম্বর হাইকোর্টের একই দ্বৈত বেঞ্চ রুল দেন। একই সঙ্গে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা এলাকায় থাকা ১৬টি আবাসন কোম্পানির নিচু জমি, জলাশয় দখল ও ভরাট কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় ওই সম্পূরক আবেদনটি করে এইচআরপিবি।