জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ড.কামাল হোসেনের দল গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য শপথ নিতে পারেন এমন একটি খবর গণমাধ্যমে এসেছে। সে বিষয়ে জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরিক দল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘০ ডিসেম্বরের ভোটে নির্বাচিতরা শপথ না নেওয়ার বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন।

সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির এই নেতা এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে শপথ গ্রহণ করবে কি না, এমন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে এখনো বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধ আছে। যেকোনো বিষয়ে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে। নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে হেরেছে প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তারা মাত্র আটটি আসনে জয় পেয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থীরা জিতেছেন ছয়টি আসনে আর গণফোরাম জিতেছে দুটি আসনে।

এর মধ্যে ঢাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর মৌলভীবাজার-২ আসন এবং সিলেট-২ আসন থেকে মোকাব্বির খান ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে জিতেছেন। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ থেকে বিরত থেকেছেন। তাঁরা সংসদে না যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।

কিন্তু শপথ নেওয়ার ব্যাপারে গতকাল দেশের একটি সংবাদপত্রে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছেন, আমার নির্বাচনী এলাকা জনগণ, যারা শত ঝুঁকি নিয়েও আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সারা দেশের অনেক নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মতও আমি নিয়েছি। আমি একজন মানুষও পাইনি, যিনি আমার শপথের বিপক্ষে। সবাই একবাক্যে বলেছেন, আমার নির্বাচনী এলাকার জনরায়কে মূল্য দিয়ে শপথ নিতে। যেহেতু জনগণের জন্য রাজনীতি করি, সেহেতু জনগণের মতামতকে মূল্য দিতে হবে।

তার মধ্যেই আজকের সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী শপথ না নেওয়ার ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্টে সকলে ঐক্যবদ্ধ আছেন বলে মন্তব্য করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, এই নির্বাচন কমিশনের কারণেই দেশের গণতান্ত্রিক সংকট আরো গুরুতর আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান অনুশীলন। সরকার সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই চূড়ান্তভাবে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে, আর এই ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের তকমা দিয়েছে এই নির্বাচন কমিশন। ভোটাররা স্বাধীন ইচ্ছায় তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার দিন শেষ হয়ে গেল। এই দেশে একটি উন্নতর গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিল এই নির্বাচন কমিশন।

এ সময় রুহুল কবির রিজভী বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, মানুষ আশা-ভরসা-উৎসাহ ও এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্ধকার শ্বাসরোধী পরিবেশে মানুষকে নির্বাক করে দেশ এখন একদলীয় দুঃশাসন প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পর্বে এসে উপনীত হয়েছে। এখানে এখন টুঁ শব্দ করা যাবে না। ভিন্নমত প্রকাশিত হলে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশি আক্রমণের মুখে পড়তে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকারও সাধারণ মানুষের আর থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় বিএনপির এই নেতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সমাজে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের বদলে এখন রাজনৈতিক কর্মকা-ে ব্যস্ত হয়ে পড়াতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে অবনতিশীল হয়েছে। সমাজজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। কারণ, সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিধানে প্রশাসন ও পুলিশ অপরাধীদের যদি দমন করতে না পারে, তাহলে সমাজে দুর্বৃত্তদের উৎপাত বীভৎস রূপ ধারণ করবে। অপরাধীরা যদি রাজনৈতিক কারণে রেহাই পেতে থাকে, তাহলে শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা ভয়াবহ সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে।

রিজভী আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি যেন কেউ দেখার নেই, শোনার নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে খুন, গুম, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো লোমহর্ষক ও ন্যক্কারজনক ঘটনা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এই যে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুরা অপহৃত হচ্ছে, কয়েক দিন পর তাদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে রাস্তা-ডোবা-নালায়।

বোঝা যাচ্ছে যে আইন নিজস্ব গতিতে চলছে না, আইন ক্ষমতাসীনদের হাতের মুঠোয়। এই কারণে আইনের প্রয়োগের বদলে ক্ষমতাসীনদের বেআইনি বলপ্রয়োগের প্রতাপে জনজীবনে অরাজকতার গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে, যোগ করেন বিএনপির নেতা।