একাদশ সংসদ দখলদারিত্বেও সংসদ অভিহিত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আবারও পুনঃনির্বাচন দাবি করেছে বিএনপি। বিকালে নতুন সংসদের যাত্রা শুরুর চার ঘণ্টা আগে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ঠিক একই কায়দায় জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে, গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে আজকে আরেকবার তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করবার জন্যে এই দখলদারিত্বের একটা সংসদ ও সরকার গঠন করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা নির্বাচনের সাথে সাথে বলেছি, আমরা এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি এবং তখন আমরা বলেছিলাম পুনরায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের যে রায় সেই রায়ে সরকার গঠন করতে হবে। আজকেও আবার আমরা সেই দাবির পুনরাবৃত্তি করছি।আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠান করতে হবে এবং জনগণ যাতে রায় দিতে পারে নির্বিঘ্নে, অবাধে তার ব্যবস্থা করতে হবে।গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। ভোট হওয়া ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে দলটি, জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন।

অন্যদিকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা সব মিলিয়ে মাত্র আটটি আসন পেয়েছে। ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি ও শরিকদের বিজয়ী নেতারা সাংসদ হিসেবে শপথও নেননি। বুধবার বিকালে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনেও তারা যাচ্ছে না।

এর আগে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে মহাসচিবের নেতৃত্বে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী মানববন্ধনে অংশ নেন। সকাল ১১টা থেকে এক ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও যোগ দেন।মানববন্ধনে ফখরুল বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখেই খালেদা জিয়াকে একবছর আগেই মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গ্রেপ্তার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে।অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান তিনি।নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। সেজন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনে যাই নাই। অনেকে সেসময়ে অভিযোগ করেছেন কেন আমরা সেই নির্বাচনে যাই নাই।৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে যে যাই নাই সেটা সঠিক ছিল এবং শেখ হাসিনার অধীনে যে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না- এটা আজকে প্রমাণিত হয়েছে। সারা বিশ্বে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে এটি কোনো নির্বাচন হয় নাই।

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘোষনা দেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ।তিনি বলেন, নির্বাচন যেটা হয়ে গেল, সেই নির্বাচনের বিবরণী আমরা দিতে চাই এবং দেব আমরা। এর ওপরে আমরা তথ্যভিত্তিক একটি শ্বেতপত্র বের করব। তাতে আপনারা দেখবেন এই যে নির্বাচনটি হয়েছে তাতে মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে এবং ৫ থেকে ৭ শতাংশ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পেরেছে। বাকী কাউকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয় নাই। এই নির্বাচনটা করেছে প্রশাসন, পুলিশ ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। এই নির্বাচনে জনগণের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

নির্বাচনের ফলাফলে বিস্ময় প্রকাশ করে মওদুদ বলেন, আমরা এই নির্বাচনে হতবাক হয়েছি, অবাক হয়েছি। আমি তো নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম, মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। আমাদের কারোরই বের হওয়ার কথা নয়। এরকম আমরা কোনোদিন প্রত্যাশা করি নাই, যেটা এবার আমরা দেখলাম।

আবদুল মঈন খান বলেন, একাদশ সংসদে আজকে যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। তারা হচ্ছেন ভুয়া ভোটের প্রতিনিধি। এবার প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় শুধু রিগিং নয়, তাদের সহায়তায় ভোট সন্ত্রাস হয়েছে।মানববন্ধনে বিএনপির সেলিমা রহমান, আবদুস সালাম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, যুবদলের মোরতাজুল করিম বাদরু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগরের উত্তরের এটিএম শামসুল হক, ছাত্রদলের আকরামুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধন পরিচালনা করেন বিএনপি প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ।