মফস্বল সাংবাদিকতার পথিকৃত, ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রবীণ সাংবাদিক, ভাষাসৈনিক আনোয়ারুল হক (৮২) আর নেই। মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিটে পাবনা শহরের শালগাড়িয়া মহল্লার নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্নালিল্লাহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে সহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। আনোয়ারুল হক বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, সাবেক ছাত্রনেতা নজমুল হক নান্নু ও পাবনা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু’র বড় ভাই মরহুম আনোয়ারুল হক। তার ছেলে সুশোভন হক টুটুল পাবনার সাবেক কৃতি ক্রিকেটার।

পাবনা প্রেসক্লাবের সম্পাদক আঁিখনূর ইসলাম রেমন জানান, বুধবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টায় তাঁকে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে আনা হবে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ যোহর শহরের ঐতিহ্যবাহি চাঁপা মসজিদে তাঁর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। পরে আরিফপুর সদর গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২ মে পাবনা প্রেসক্লাবের ৫৬ বছর পূর্তিতে প্রবীণ সাংবাদিক রনেশ মৈত্র ও আনোয়ারুল হককে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা-সম্মাননা দেয়া হয়। ১৯৬১ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন আনোয়ারুল হক। প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার বছর ৮-৯ মে পাবনায় অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলন। সেই সভা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সমিতি, যা বর্তমানে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি হিসেবে পরিচিত। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বগুড়ার মো. হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক আবদুস সালাম, মর্নিং নিউজের এস জি এম বদরুদ্দিন। সেই সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা পেশার স্বীকৃতি তথা রিটেইনার, লাইনেজ, পোস্টাল চার্জ, টেলিগ্রাম চার্জ, ছবির বিলসহ অন্যান্য খরচ পাওয়া শুরু করেন। পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই সেদিন সংবাদপত্রে মফস্বলে কর্মরত সাংবাদিদের পেশার স্বীকৃতি ঘটেছিল। যাদের হাত ধরে এই স্বীকৃতি, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আনোয়ারুল হক। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাকের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। ভাষা আন্দোলনেও রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি ১৯৬৭ সালের ভুট্রা আনোলন্দের সৈনিক ছিলেন।

প্রবীণ সাংবাদিক, ভাষা সৈনিক আনোয়ারুল হকের মৃত্যুতে পাবনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মি, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, অবজারভার করসপন্ডেন্ট এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর ভাবে শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।