নদী দখল নিয়ে আলাদা আলাদা মামলা ও পুনঃদখলের কঠোর সমালোচনা করেছেন হাইকোর্ট।আদালত বলেন, দেশে শত শত নদী রয়েছে। এসব নদী দখলকে কেন্দ্র করে পৃথক মামলা ও পৃথক আদেশ হয়। দখলদাররা ফের গিয়ে দখল করে। এমনটি চলতে দেওয়া যায় না। আমরা এসব বিষয়কে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে চাই। নদী নিয়ে এসব কানামাছি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) তুরাগ নদী রক্ষা সংক্রান্ত একটি মামলার রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।আদালত বলেন, এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের একটি রায় ও গাইড লাইনের আলোকে নদী কমিশন গঠিত হয়েছে। আইন তৈরি হয়েছে। আমরা সেটি দেখে আরও কিছু গাইড লাইন দিয়ে রায় দেব।এ জন্য আগামী রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাকি রায় ঘোষণার জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।

এর আগে বুধবার (৩০ জানুয়ারি) মানুষের মতো নদ-নদীও পাবে আইনি অধিকার’; এমন অভিমত দিয়ে রায় ঘোষণা শুরু করেন আদালত। রায়ে তুরাগ নদীকে ‘লিগ্যাল পারসন’ ঘোষণা করা হয়।এ মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের আলোকে আইন প্রণেতারা যখন আইন প্রণয়ন করেছেন, তখন নদীরক্ষা কমিশনকে একটি ঠুটো জগন্নাথ হিসেবে তৈরি করেছেন।কমিশন শুধু প্রতিবেদন বা সুপারিশ দিতে পারবে। কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে না। সেই কারণে কমিশনের যে উদ্দেশ্য গঠিত হয়েছে, তা পরিপূর্ণতা পাচ্ছে না। এ কারণে আমরা বার বার আদালতে আসি।

আদালত বলেছেন, আমরা এমন একটি রায় দিতে চাই। যেন অবৈধ দখলমুক্ত করতে বারবার আদালতে আসতে না হয়। এসব বিষয় নিয়ে আদালত দেখছেন অন্য আরও বিষয়ে দেখে রায় দেবেন। যেন একটি গাইড লাইন অন্য একটির সঙ্গে কনফ্লিক্ট তৈরি না হয়।এ সময় আদালত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়েও কথা বলেছেন। আদালত বলেন, সাংবাদিকদের তথ্যবহুল প্রতিবেদনের আলোকেই আমরা সমাজের অনিয়মের কথা জানতে পারি। সাংবাদিকরা বংশীবাদকের মতো। নদী দখলসহ সব ধরনের অনিয়মের কথা সাংবাদিকরাই তুলে ধরেন।

আমাদের দেশের সাংবাদিকতার অনেক উন্নয়ন দরকার।যুক্তরাষ্ট্রের দুই সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের রেফারেন্স দিয়ে আদালত বলেন, আমাদের দেশেও সেই ধরনের জার্নালিজম হওয়া দরকার। এতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।

উল্লেখ, তুরাগকে মৃত্যু ঘোষণা সময়ের ব্যাপার শিরোনামে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ডেইলি স্টার-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে উম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ রিট আবেদন করে। এরপর এই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত কয়েক দফা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশসহ রুল জারি করেন। ওই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে বুধবার থেকে রায় ঘোষণা শুরু করেন আদালত।