কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ভর্তুকী আরও বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে বলেন, আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো দেশে জনসংখ্য এখনও বাড়ছে। আমাদের শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেই চলবে না। তার সঙ্গে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিজাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও ৫নং অঙ্গীকার ছিল নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিজাতীয় খাদ্যের বিষয়টি। কৃষকরা এখন চাষই করতে চাচ্ছে না। উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমিকের খরচই সবচেয়ে বেশি। অনেক কৃষি ক্ষেত পতিত পড়ে আছে। শ্রমিকতো নাই বললেই চলে। বর্তমানে কৃষি শ্রমিকের বিরাট সংকট রয়েছে। শ্রমিকরা অন্য পেশা গেলেও কৃষিতে কাজ করতে যেন তাদের আগ্রহ নেই। ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিকল্প নেই। আমি মনে করি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কৃষিকে লাভবান করতে হলে এ মূহুর্তে কৃষক পর্যায়ে আরো ভর্তুকী দিতে হবে। আরো ইনসেটিভ দিতে হবে।

কৃষি মন্ত্রী বলেছেন, রাজনীতি একটা কঠিণ পেশা। এটা অনেক আনসারটেন, অনেক ডিফিকাল্ট। কত মানুষকে দেখেছি, ইতিহাসে পড়েছি, তারা রাজনীতির জন্য আত্মহুতি দিয়েছেন, সর্বশান্ত হয়েছেন। জমি-জমা, ঘর-বাড়ি বিক্রি করে এ রাজনীতিতে ত্যাগ স্বীকার করেছে। তারা তাদের নিজের ছেলে-মেয়ে, সংসার বাদ দিয়ে, তাদের কথা ভুলে গিয়ে রাজনীতিতে বেশি সময় ও সম্পদ দিয়েছেন। রাজনীতি একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। আমার নয় বছর চাকুরি ছিল। আমিও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০০১সালে সেই চাকুরী ছেড়ে বিরাট ঝুকি নিয়ে রাজনীতিতে ঢুকেছিলাম। বিভিন্ন সময় আমাকে হামলার শিকার হতে হয়েছে। মানুষ আশা করে যে একজন রাজনীতিকবিদ সার্বিক মানুষের কল্যাণে, মঙ্গলে তার বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে লিডারশীপ করবে।

শনিবার দুপুরে কৃষি মন্ত্রী বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউ (ব্রি)) মিলনায়তনে পাঁচদিন ব্যাপি ব্রি’র বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা-২০১৭-১৮-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওইসব কথা বলেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রি’র মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. ফজলে ওয়াহেদ খোন্দকার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. কবির ইকরামুল হক, কৃষি সম্প্রসারণ মহাপরিচালক মীর নূরুল আলম, ব্রি’র (প্রশাসন) মো. আনসার আলী বক্তব্য রাখেন। এতে ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) তমাল লতা আদিত্য কর্মশালার মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

কৃষি মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিএডিসি, কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের ডিজি নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি ইজ নট ক্রাইটেরিয়া। এসব প্রতিষ্ঠানে ডিজি বা বিভাগীয় প্রধান সে-ই হবেন, যিনি বিজ্ঞানী হিসেবে অত্যন্ত ভাল, প্রফেশনালি, একাডেমিক্যালি খুবই সাউন্ড, খুবই নলেজ্যাবল, প্লাস লিডারশীপ এন্ড ম্যানেজেরিয়াল কোয়ালিটি আছে সে-ই হবেন ডিজি। আমি যতদিন মন্ত্রী আছি, আমি এটাই ফলো করব। এক্ষেত্রে আমি শুধু সিনিয়রিটি যোগ্যতা হিসেবে অনুসরন করব না।

ব্রি’র উদ্ভাবিত জাত নিয়ে সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন,এতো ভ্যারাইটি ডেভেলপ হচ্ছে কিন্তু আমরা মাঠে গেলে দেখতে পাই ব্রি ধান ২৮, ব্রিধান-২৯ এবং বিআর-১১। এ তিনটি ভ্যারাইটি ডমিনেন্ট করছে। অন্য ভারাইটিগুলো কেন মাঠে যাচ্ছে না, জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে। জাত উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীদের চিকন চাল ও তার স্বাদের দিকেও গুরুত্ব দিতে বলেছেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার মূল্যের সয়াবিন, পাম অয়েল জাতীয় ইডিবল অয়েল আমদানি করছি। এক্ষেত্রে যদি আমরা দেশে সরিষা উৎপন্ন করে যোগান দিতে পারি তারজন্য প্রকল্প নেয়া হবে।

মন্ত্রী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের বাংলার সঙ্গে ইংরেজী বলার প্রসঙ্গে বলেন, ইংরেজী কিন্তু কোন ভাষা নয়। ইটস এন ইস্ট্রুমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন। বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য ইংরেজীর প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের দেশে ফেব্রুয়ারি মাসের একটা ইমোশন দিয়ে ইংরেজীকে ইগনোর করা হয়েছে। তিনি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত ও শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনে বলেন, এসব দেশের বিজ্ঞানীরা ইংরেজীর উপর ভর করে সায়েন্টিফিক কমোনিটিতে আন্তর্জাতিকভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই ইমোশনের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে, যারা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে কাজ করেন তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা আছে। চাইনীজরা, জাপানীজরাও এখন ইংরেজী শিক্ষার জন্য পাগল, তারা ইংরেজী শিক্ষার জন্য নানা রকম কর্মসূচী নিয়েছে। তিনি বিজ্ঞানীদের কমিউনিকেশন স্কীল আপগ্রেড করতে হবে। বিজ্ঞানীদের প্রমোশন দেয়ার বেলায় কমিউনিকেশ স্কীলের গুরুত্ব দেয়া হবে।

নির্বাচন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকার ডোনাল্ড ট্র্যাম্প থেকে শুরু করে বিশে^র বিভিন্ন দেশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে। ছোট খাটো ভুল ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গঠণে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকবে, যারা অবশ্যই আমাদের সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরবে। একই সঙ্গে সরকারকেও গঠণমূলক সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রী চান আমাদের মধ্যে দূরত্বটা যেন কমে আসে। আমরা পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী ৫ বছর দেশটাকে পরিচালনা করি। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে গণভবনে চা-চক্রে আমন্ত্রন জানিয়েছেন। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করে দেশ গঠন করবো। বিএনপিসহ কিছু কিছু রাজনৈতিক যেভাবে বলছে এটা তাদের সংকীর্ণতা। যারা চা-চক্রে আসতে চাচ্ছেনা সেটা তাদের সংকীর্ণতা। এতে তারা লাভবান হবেনা, বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আগামী দিনেও প্রধানমন্ত্রীর উদারতাকে সহজভাবে মেনে নিতে না পারলে তারা জনগণ থেকে আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে।