কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা বলেছেন, কারা কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জট দুর করে পদোন্নতি তরান্বিত করা হচ্ছে। কারা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধির কাজও চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৬তম বিসিএস নন ক্যাডার থেকে ডেপুটি জেলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। রাজশাহীতে কারাপ্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সমাপ্ত হবে এবং কেরাণীগঞ্জে ’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি’ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বন্দিরা যাতে আত্মকর্মসংস্থান তথা নিজেদের সক্ষম করে তুলতে পারে সেজন্য তাদের আগের ২৮টি ট্রেডের স্থলে বর্তমানে ৩৮টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কারাভ্যন্তরে বন্দিরা কাজ করে তারা যে অর্থ উপার্জন করছে তার ৫০শতাংশ অর্থ তাদের (বন্দিদের) প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে ৫টি কারাগারে এর বাস্তবায়ন করেছি।
বৃহস্পতিবার সকালে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে নবীন রিক্রুট কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের ৫৪তম শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওইসব কথা বলেন। এসময় অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল মো. ইকবাল হাসান, কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. বজলুর রশীদ, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সুপার সুব্রত কুমার বালাসহ বিভিন্ন কারাকর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, কারাগার একটি সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। কারাগারে দায়িত্ব পালন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভিন্নতর এবং চ্যালেঞ্জিং। এখানে দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে কর্তব্যপালন করতে হয়। কারাভ্যন্তর হতে জঙ্গী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যাতে কোনরূপ সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালাতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। শৃঙ্খলা ও মানবিকতাকে প্রধান্য দিয়ে অনিয়ম ও দূর্নীতিকে প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বন্দিদের শৃঙ্খলা রক্ষা করে তাদের প্রতি মানবিক সু-দৃষ্টি প্রদান করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারাগারগুলোকে কল্যাণমূখী ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তথা সংশোধনগার হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদানের পাশাপাশি চারিত্রিক ও নৈতিক উন্নতির বিষয়ে প্রেষণা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আধুনিক অস্ত্র, নিরাপত্তা যন্ত্রপরিচালনা, অস্ত্র বিহীন প্রতিরক্ষা কৌশল, তথ্য প্রযুক্তি, কম্পিউটার, দূর্যোগ মোকাবেলা, আত্মরক্ষা কৌশল, অপরাধ তত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে তৈরির অংশ হিসেবে ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, কারাবন্দিদের সকালের নাস্তার মেনুতে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং এখন থেকে ১৫ দিন অন্তর বন্দিরা তাদের স্বজনদের সাথে ১০মিনিট সময় দেখা করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রশিক্ষণার্থী নবীন কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের মধ্যে সর্ববিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের নবীন মহিলা কারারক্ষী ছনিয়া খানম, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের নবীন কারারক্ষী মো. সুমন আহমেদ এবং বেস্ট ফায়ারার ঝালকাঠি জেলা কারাগারের নবীন কারারক্ষী এসএম মুশফিকুর রহমানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
২০১৮সালের ১২ আগস্ট ৫৪তম প্রশিক্ষণ কোর্সটি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের শুরু হয়। এ কোর্সে ৩৮জন মহিলা কারারক্ষীসহ ৩২০জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন। সেখানে তিনমাস প্রশিক্ষণের পর একই বছরের ১৬ নভেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবশিষ্ট প্রশিক্ষণ কাজ শেষ করা হয়।