অমর একুশে গ্রন্থমেলার শিশু প্রহরের শুক্রবার দ্বিতীয় দিনেও শিশুদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। বাবা-মায়ের হাত ধরে সকাল ১০টা থেকে শিশু চত্বরে ভিড় করতে শুরু করে তারা। শিশুদের উপযোগী করে সাজানো হয়েছে এবারের শিশু চত্বর। তাদের প্রবেশের জন্য করা হয়েছে আলাদা গেট। বই কিনতে স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়ানো, আর ইকরি-হালুমদের সরাসরি দেখতে পাওয়ায় উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে শিশুদের মাঝে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিশুদের জন্য সাজানো হয়েছে সিসিমপুর চত্বর। যেখানে কিছুক্ষণ পর পর শিশুদের জন্য সিসিমপুরের শো দেখানো হচ্ছে। ইকরি আর হালুমদের সরাসরি দেখতে পাওয়ায় বেশ উত্তেজনা লক্ষ করা যায় শিশুদের মাঝে। বিভিন্ন কার্টুন ও পাপেট দিয়ে সাজানো আছে শিশু চত্বর।

রাজধানীর মিরপুর থেকে বাণিজ্যমেলার জ্যাম ঠেলে বইমেলায় এসেছে ক্লাস টু এর ছাত্র নাহিয়ান। বই কেনার সময় স্টলে কথা হয় নাহিয়ানের সঙ্গে। সে বলে, ‘বই মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। গতবার আমি প্রথম বই মেলায় এসেছিলাম। বাবা-মা বলেছে, প্রতিটি শিশু প্রহরে আমাকে বই মেলায় নিয়ে আসবেন। মেলায় আসা অপর শিশু রাফিন। তার বাবা বলেন, সকাল থেকে একঘণ্টা হয়ে গেল ঘুরছি। এখানে অপরিচিত শিশুদের সঙ্গে রাফিনের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।

ছোটদের বইয়ের স্টলগুলোতে শিশুদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। ঝিঙেফুল প্রকাশনার রিফাত খান বলেন, শিশুদের জন্য এবার শিশু চত্বরে আলাদা গেট করাই সুবিধা হয়েছে। শিশুরা তাদের নিজেদের জায়গাটা চিনতে পারছে। শিশু-কিশোরদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে হাজির হয়েছে ঝিঙেফুল। শিশুরা আসছে, বই দেখছে ও কিনছে। পাঠক হিসেবে তাদের তৈরি হওয়ার এখই সময়।

ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই গ্রন্থমেলার গেটে অসংখ্য শিশু অপেক্ষা করছিলো বাবা-মায়ের হাত ধরে। গেট খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদের হাতে হাত রেখে মেলাতে আসতে শুরু করে তারা। বেলা ১২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ পূর্ণ হয়ে যায় শিশুদের পদচারণায়। এসময় প্রায় প্রত্যেক অভিভাবকের সঙ্গে দেখা মেলে একজন-দু’জন শিশুর।অমর একুশে গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষ সপ্তাহের দু’দিন শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শুধু শিশুদের জন্য মেলার সময় বরাদ্দ করেছে। আর এ সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন অভিভাবকরা।

শিশুপ্রহরে বাবা-মায়ের হাত ধরে বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে বই দেখে শিশুরা। এক একটি স্টলে ঢুকে রঙ-বেরঙের বই নেড়েচেড়ে দেখছে তারা। কিনে নিচ্ছে পছন্দের বইটি। হাজারও বইয়ের সঙ্গে নিজের সন্তানকে পরিচয় করিয়ে দিতে এসময় সঙ্গে ছিলেন মা-বাবারাও।মেলায় আসা এক মা বলেন, বাচ্চার পড়াশুনার সেরকম বয়স হয়নি এখনও। বিভিন্ন ধরনের ফল-ফুল-পশু-পাখির ছবি দেখে দেখে যেন বলতে পারে, এজন্য সেসব বই খুঁজছি।সরকারি কর্মকর্তা আনিস আহমেদ জানান, ছোট বয়স থেকেই বই পড়ার ভিত্তিটা মজবুত করলে বইয়ের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় অনাবিল আনন্দ। তাই ছোটবেলা থেকেই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসা।

শুধু বই নয়, শিশুদের কাছে সকালে মেলার মূল আকর্ষণ শিশু চত্বরে সিসিমপুরের পরিবেশনা। তবে সে পরিবেশনার আগে মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন।শিশুপ্রহরে মেলায় এসেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। সিসিমপুরের মঞ্চে তিনি কথা বলেন, খেলা করেন শিশুদের সঙ্গে।