* একাধিক পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা হতে প্রতিবন্ধকতা দুর করতে নিজ সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে।

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রীর পরকিয়ার জেরে ৫ বছরের শিশু কন্যাকে গলাটিপে হত্যার পর লাশ খাটের নীচে পাতিলে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় নিহতের বাবাকে সোমবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে নিহতের মা নাসরিন আক্তার। গ্রেফতারকৃতের নাম রফিকুল ইসলাম। সে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার চাপাত এলাকার মাঈন উদ্দিনের ছেলে।

শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রীর পরকিয়ার জেরে ৫ বছরের শিশু কন্যা মনিরা খাতুনকে গলাটিপে হত্যা করে লাশ ঘরের খাটের নীচে অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় শিশুটির ঘাতক বাবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার তাকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জয়দেবপুর রেলগেইট এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রফিকুল পারিবারিক কলহের জেরে রবিবার বিকেলে রুমাল দিয়ে ঘুমন্ত কণ্যার মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে মনিরাকে হত্যা করে লাশ পাতিলে লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেছে। একাধিক পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা হতে প্রতিবন্ধকতা দুর করতে সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে। এদিকে শিশু সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে নিহতের মা নাসরিন আক্তার। তারা শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিমখন্ড (মাষ্টারবাড়ী) এলাকার ইয়াছিন হাজীর বাড়ির ভাড়া বাসায় থাকে। ডেনিমেক পোশাক কারখানার কর্মী নাসরিন আক্তার ও রফিকুল ইসলামের একমাত্র সন্তান মনিরা খাতুন স্থানীয় হাজী মোহাম্মদ আলী প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্লে­ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, স্ত্রীর একাধিক পরকীয়ায় ক্ষুব্ধ হলেও সন্তানের টানে সংসার ছেড়ে যেতে না পেরে পথের কাটা দুর করতে রফিকুল তার সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এব্যাপারে শ্রীপুর থানার এসআই মাহমুদুল হাসান ও স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সালে গাজীপুরের শ্রীপুর থানার গোসিঙ্গা এলাকার গোলাপ হোসেনের মেয়ে নাসরিন আক্তরের সঙ্গে পারিবারিকভাবে কাপাসিয়া থানার চাপাত এলাকার মাঈন উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। এটি নাসরিনের তৃতীয় বিয়ে। বিয়ের পর এ দম্পতি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সালনা এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তানের (মনিরা খাতুন) জন্ম হয়। পরবর্তীতে নাসরিন পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধের এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে নাসরিন তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি ছাড়ে। এদিকে স্ত্রী-সন্তানের টানে রফিকুল গত প্রায় ৬মাস আগে স্ত্রীর কাছে ফিরে এসে পুনঃরায় এক সঙ্গে সংসার শুরু করে। তারা দুই মাস আগে (গত ১ ডিসেম্বর) শ্রীপুরের ডেনিমেক পোশাক কারখানায় চাকুরী নিয়ে স্থানীয় কেওয়া পশ্চিম খন্ড (মাষ্টারবাড়ী) এলাকার ইয়াছিন হাজীর বাড়ির ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে। কিন্তু বাসা বদলের পর তার স্ত্রী আবারো অপর এক পুরুষের সঙ্গে নতুন করে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। স্ত্রীকে বাঁধা দিয়েও ফেরাতে পারে নি রফিকুল। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। এরই মাঝে নাসরিন তার মায়ের জমি বিক্রির ৯৩ হাজার টাকা পায়। এ টাকা নিয়ে শনিবার রাতে তাদের মাঝে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। পরদিন রবিবার সকালে স্ত্রী কারখানায় চলে গেলেও অসুস্থ্যতার কথা বলে রফিকুল কারখানার কাজে যায়নি। মধ্যাহ্ন বিরতিতে দুপুরে বাসায় নাসরিন তার শিশু কন্যা ও স্বামীর সঙ্গে একত্রে খাওয়া-দাওয়া করে আবার কারখানায় চলে যায়। দুপুরে রফিকুল তার মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে রফিকুল রুমাল দিয়ে তার ঘুমন্ত মেয়ের মুখ চেপে ধরে শ্বাস রোধে হত্যা কওে লাশ খাটের নীচে পাতিলে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।

এদিকে বিকেল ৫টায় কারখানা ছুটির পর নাসরিন বাসায় ফিরে মেয়েকে না দেখে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করতে থাকে। কোথাও না পেয়ে নাসরিন আক্তার বিষয়টি পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে শ্রীপুর পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে নাসরিনের ঘরের ভিতর খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ভিতর ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে নিহতের বাবা পলাতক থাকে। পুলিশ তার খোঁজে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে সোমবার জয়দেবপুর এলাকা হতে ঘাতক পিতা রফিকুলকে গ্রেফতার করে। এদিকে শিশু সন্তান হত্যার অভিযোগে সোমবার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে নিহতের মা নাসরিন আক্তার।