গাজীপুরের শ্রীপুরে দাম্পত্য কলহের জেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে স্বামীর দেওয়া আগুনে দ্বগ্ধ এক নারী গার্মেন্টস কর্মী মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। ঘটনার সময় শরীরের আগুন নিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে তার স্বামীও দ্বগ্ধ হয়। নিহতের নাম শিউলী আক্তার (৩৫)। সে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের শুক্কুর আলীর কন্যা।

শ্রীপুর থানার এসআই আব্দুল মালেক ও নিহতের বাবা শুক্কুর আলী জানান, প্রায় একযুগ আগে বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সরূপকাঠি উপজেলার আব্দুল মোতালেবের ছেলে শহীদুল ইসলামকে ভালবেসে বিয়ে করে শিউলী আক্তার। এটি উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর হতে নানা বিষয়াদি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া কলহ চলে আসছিল। প্রায়শঃ স্বামী তাকে মারধরও করত। গত কিছুদিন ধরে শিউলী শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের আব্দুর রশীদের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় ছাতিরবাজার এলাকার দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল) শিল্প গ্রুপের পোশাক কারখানায় শ্রমিকের চাকুরী করত। তার স্বামী প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে এলাকায় গাড়ি চালায়। প্রতি মাসে কারখানা থেকে বেতন পেলে শিউলীর কাছ থেকে প্রায় সব টাকা নিয়ে যেত শহীদুল। সোমবার রাতেও কারখানা থেকে পাওয়া বেতন স্বামী কেড়ে নিতে চাইলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। মধ্যরাতে শিউলী ঘুমিয়ে পড়লে শহীদুল প্রতিবেশী কয়েক ভাড়াটিয়ার ঘরের দরজার বাহির থেকে সিটকিনি আটকিয়ে দেয়। পরে সে ঘরে ঘুমন্ত শিউলীর গায়ে কোরোসিন ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় শরীরের জ্বলন্ত আগুন নিয়ে শিউলী জেগে উঠে ডাক চিৎকার শুরু করে। ঘটনার সময় শহীদুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিউলী আগুন নিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। টের পেয়ে অন্য প্রতিবেশীরা এগিয়ে ওই কক্ষ থেকে দ্বগ্ধ শিউলীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু ততক্ষণে শিউলীর শরীরের অধিকাংশ ঝলসে যায় এবং শহীদুলেরও দু’হাতসহ শরীরের কিছু অংশ পুড়ে যায়। হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে শিউলী মারা যায়। তার স্বামী পুলিশের নজরদারীতে একই ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শহীদুল তার স্ত্রীর শরীরে আগুন দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।