ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল। বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। এরআগে, প্রায় দীর্ঘ ৯ বছর পরে মধুর ক্যান্টিনে যান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পুনঃতফসিলের পাশাপাশি ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে করা, পাশাপাশি ভোটার হওয়ার বয়সের যে প্রতিবন্ধকতা তা প্রত্যাহার, ডাকসুর সভাপতির যে অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা তার ভারসাম্যের দাবিসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি রাজিব আহসান।তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন হবে। বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি, ইতিবাচক চিন্তা করছি এবং ইতিবাচকভাবে দেখতেও চাই। তবে নির্বাচনের আগে প্রশাসন আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেবে বলে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি, তারা অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের দাবিগুলো আন্তরিকভাবে মেনে নিয়ে ডাকসু নির্বাচনের পথে হাঁটবে।

২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদগুলোর নির্বাচন। নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে লড়বেন প্রার্থীরা।সংবাদ সম্মেলন শেষে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হক বলেন, ‘আমরা মনে করি আজকে সহাবস্থানের যাত্রা শুরু হলো। তবে ক্যাম্পাসে একদিন আসলেই সহাবস্থান নিশ্চিত হয় না। আগামীতে আজকের মতো পরিবেশ অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা করি। এছাড়াও পুরোপুরি সহাবস্থান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ডাকসুর তফসিল পিছিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী, সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির উপ সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ।

ক. আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত। ন্যূনতম তিন মাস ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিশ্চিতের পর তফসিল ঘোষণা। খ. আবাসিক হল থেকে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থানান্তর। গ. ভোটার হওয়ার বয়সের যে প্রতিবন্ধকতা আছে তা প্রত্যাহার। ঘ. তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি প্রচারণার প্রতিবন্ধকতা দূর করা। প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের কোনও প্রকার হয়রানি, মামলা অথবা গ্রেফতার যাতে না করা হয় তা নিশ্চিত করা। ঙ. সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর যে হামলা ও নির্যাতন হয়েছে তার নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। চ. ডাকসুর নির্বাচন পরিচালনা ও উপদেষ্টা কমিটিসহ এ বিষয়ে গঠিত সব কমিটির পুনর্গঠন। ছ. ডাকসু সভাপতির যে অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা রয়েছে তাতে ভারসাম্য আনা। এ জন্য ৫ (এ) ধারা সংশোধন করে ছাত্র সংসদ বিলুপ্তি অথবা কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সভাপতি ও ছাত্র সংসদের যৌথ সিদ্ধান্তের বিষয় সংযোজন করতে হবে এবং ৮ (এম) ধারাটি সংশোধন করতে হবে।

এরআগে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রায় নয় বছর পর ঢাবিতে প্রথম মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ওইদিন সকালে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এরপর তারা একঘণ্টা উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা এসময় ডাকসু নির্বাচন তিন মাস পেছানোসহ সাত দফা দাবিতে ভিসিকে স্মারকলিপি প্রদান করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে পরে তারা ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। মিছিলে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্রদল সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশ করে। ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে। তখন সে সময়ের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। এরপর আর ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে মিছিল করতে দেখা যায়নি। তবে এর পরের বছর (২০১১) ওই হামলার এক বছর পূর্তিতে হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রদল শাহবাগ থেকে মিছিল বের করে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে পুলিশি বাধার কারণে ছাত্রদলের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।