ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল, চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায়, বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণবায়। বুধবার ছিল পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। কোকিলের কুহু কুহু ডাক আর ফাল্গুনের মৃদু হাওয়ায় দুলে পত্র-পল্লব জানান দিচ্ছে, প্রকৃতি সেজেছে রঙিন সাজে।

বসন্ত নিয়ে এসেছে নতুন প্রাণের কোলাহল। আমের শাঁখায় দোল খাচ্ছে নতুন মুকুল, শীতের খোলস ছেড়ে আড়মোড়া ভেঙ্গে ফুলে-ফুলে ছেয়ে গেছে প্রকৃতি।গাছের কচি-পাতায় নতুন রঙ আর আলোর নাচনের সঙ্গে মানুষের মনেও লেগেছে বসন্তের রঙিন হাওয়া। চিরচেনা এই রাজধানীর রূপ বসন্তের আগমনে যেনো হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে। লাল, হলুদ, সবুজ আর বাসন্তী রং এ নিজেদের রাঙিয়েছে রাজধানীর মানুষ। পরিবার পরিজন কিংবা প্রিয় মানুষের হাত ধরে বসন্তকে বরণ করে নিতে উচ্ছল মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে উৎসব-প্রেমীরা। দেখা গেছে, ফাল্গুনের প্রথম প্রহরেই রাজধানীর শাহবাগে নেমেছে বাসন্তী রঙ এর ঢল। সকালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বসন্তকে বরণ করে নেয়া হয়েছিল উৎসবের মাধ্যমে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিএসসি, কলাভবন আর এর আশেপাশের এলাকায় ভিড় জমছে বসন্ত-প্রেমীদের।কলাভবনে নেচে-গেয়ে চলছে পহেলা ফাল্গুন উদযাপন। সববয়েসী মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে আছে চারপাশ।

সপরিবারে কলাভবনে ঘুরতে বের হওয়া সোহেল আহমেদ বলেন, বসন্ত বাঙালির জীবনে নতুন এক আবেশ নিয়ে আসে, আর এই আবেশে মন রাঙাতেই পরিবার নিয়ে চলে এসেছি বসন্তকে বরণ করে নিতে। এছাড়াও বসন্তের সঙ্গে বাঙালির ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে, তাই ছেলেকে এই ঐতিহ্যের গুরুত্ব বুঝাতেই বসন্তের সাজে আজ এখানে আমরা।বসন্তকে বরণ করে নিতে আয়োজনে এতোটুকু কার্পণ্য করেনি পাহাড়িরাও। বাসন্তী সাজে কোলে দুই বছরের শিশুকে নিয়ে ঘুরতে আসা পল্লবী মারমা বলেন, এখানে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে, চারদিকে খুব উৎসবমুখর পরিবেশ। উৎসব একটি সার্বজনীন ব্যাপার আর উৎসবের আনন্দ সবার। এখানে এসে আমি খুবই খুশি’।বসন্তের প্রথম দিনে শিশুরাও রয়েছে প্রাণোচ্ছল। মাথায় ফুলের মুকুট দিয়ে খুশি-মনে ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে তারা। ছোট্ট ভাইটির হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো দশ বছরের শিশু মারিয়া সারাবাংলাকে জানিয়েছে, ‘অনেক ফুল কিনেছি আর আম্মুর সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে আমার।

বসন্তের রঙ ছড়াচ্ছে রঙিন সাজে ঘুরতে বের হওয়া তরুণ-তরুণীরাও। প্রিয় মানুষের হাত ধরে কোলাহল আর উৎসব ছাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। কেউ ফুল কিনে হাসিমুখে গুঁজে দিচ্ছে প্রিয় মানুষটির খোঁপায়, কেউবা হুড খোলা রিক্সায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এখান থেকে ওখানে। যেনো একে অন্যকে বলছে, পলাশের নেশা মাখি চলেছি দু’জনে, বাসনার রঙে মিশি শ্যামলে স্বপনে।

বসন্ত জীর্ণ এই নগরীতে নিয়ে এসেছে নতুন প্রাণ। দিকে দিকে ছড়িয়ে গেছে প্রাণের উৎসবের রঙ। দিনব্যাপী চলবে এই বসন্ত বরণ, বিকেলে আরও জমে উঠবে বসন্তের বন্দনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুলতলা, বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে একযোগে চলবে অনুষ্ঠান। রব উঠবে, ‘কুহু কুহু শোনা যায় কোকিলের কুহুতান, বসন্ত এসে গেছে।