চলতি সপ্তাহেই পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউনগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে। অভিযানে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গোডাউনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন।

শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা জানান। ‘ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি ইস্যুজ ইন বাংলাদেশ, চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর এবং ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোি য়েশন অফ বাংলাদেশ (ইসাব)।

সাঈদ খোকন বলেন, জনবহুল পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউনগুলো একটা বড় সমস্যা। নিমতলি ট্রাজেডির পরই কেমিক্যাল গোডাউনগুলো সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সম্ভব হয়নি। চলতি সপ্তাহেই ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গোডাউনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমন কেমিক্যাল ছাড়া কেউ ব্যবসা করতে পারবেন না।

বিভিন্ন অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর নাশকতার প্রশ্ন উঠলেও শেষ পর্যন্ত সুরাহা না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কড়াইল বস্তি, গুলশানের সিটি কর্পোরেশন মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি অগ্নিকা-ে পর সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে নাশকতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু সেসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি কিংবা মামলা হলেও বিষয়গুলোর সুরাহা হয়নি। অগ্নিকা-ের কারণটাও জানা সম্ভব হয়নি।

এসব অগ্নিকা-ে ঘটনা যদি ক্রাইম হয়ে থাকে তাহলে আমরা একটা ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ফায়ার সার্ভিস ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা, অনুরোধ বা আহ্বান জানাবো, অন্তত একটি ক্রাইমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হচ্ছে। এগুলোকে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে বলেও জানান তিনি।মেয়র বলেন, ঢাকা শহরে হাজারো সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে অগ্নিকা-ের চ্যালেঞ্জগুলো একটা বড় সমস্যা। তবে গত ১০ বছরে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়তো আরও কিছু সময় লাগবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সক্ষমতাও বাড়বে।

নগরীর গ্যাস লাইনগুলোতে সেন্সর ইনস্টল করতে পারলে এটা হবে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটা প্রকল্প চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পের প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সামনের বছর নাগাদ সবাই ওই প্রকল্পের সুফল পাবেন।স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন তার আলোচনায় বলেন, সারা শহরের নিচে মাকড়সার জালের মতো গ্যাসের লাইন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ভূমিকম্পের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে গ্যাসের লাইনগুলো বিস্ফোরিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যা হবে তা আমাদের চিন্তার বাইরে। তাই খুব শিগগির গ্যাস লাইনগুলোতে অটোসেন্সর স্থাপন করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান। তিনি তার বক্তব্যে অগ্নিকা-ের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

এছাড়া, অন্যান্য সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে করণীয় ও চলমান কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন।