ফাগুনের প্রথম ভাগে ঝড়-বৃষ্টিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলার হাজারো বই ‘পুরোপুরি নষ্ট’ হয়ে গেছে বলে প্রকাশকরা জানিয়েছেন। রোববার ভোর থেকে কয়েক দফায় বজ্রসহ দমকা হাওয়া ও ঝড়-বাদলে মেলার দুই ডজনের বেশি স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মেলার সহ-আয়োজক বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ জানিয়েছেন।

ঝড়ো বাতাসে মেলার বেশ কয়েকটি স্টলের ছাদ উড়ে গেছে।কোনো কোনোটিতে টিনের ফাঁক গলে পানি পড়ে সয়লাব হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে পর্দা উড়ে পানি ঢুকেছে স্টলে।তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেলার শিশু চত্বর। বিকাল পর্যন্তও সেখানে পানি জমে আছে।

ফরিদ আহমেদ বলেন, ঝড়ে বইমেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাজারো বই একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছি আমি।প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপনে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ফাল্গুনের প্রথম ভাগে ঝড়ো বৃষ্টির আভাস থাকায় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই সতর্ক করে দিয়েছিল প্রকাশকদের। শনিবার সন্ধ্যা থেকে মাইকিংও করা হয় গ্রন্থমেলা চত্বরে।

প্রকাশকরা প্রস্তুতি নিলেও তা ‘পর্যাপ্ত ছিল না’ বলে মনে করেন প্রকাশ সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ।যেসব স্টল একেবারেই ধসে পড়েছে, তাদের স্টল নির্মাণে ত্রুটির বলেছেন তিনি।

ফরিদ আহমেদ জানান, ঝড়ো বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বইমেলার শিশু চত্বর। বাংলা একাডেমির ভেতরে বহেরা তলায় লিটল ম্যাগ চত্বরেও বেশ কিছু স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ, অ্যাডর্ন, মাওলা ব্রাদার্স, ইউসিএল, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, অন্বেষা, মূর্ধন্যসহ অনেকগুলো স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝড়-বাদলে।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের অন্যতম স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসান শায়ক জানান, তার প্রকাশনীর ৩০০ বই ভিজে নষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, মেলায় বড় প্রকাশন (প্যাভিলিয়নগুলো) খোলা জায়গায় পড়েছে। দমকা হাওয়ার ঝাপটা তাই বেশি লেগেছে প্যাভিলিয়নে।

এদিকে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ফাগুনের প্রথম ভাগে ঝড়ো বৃষ্টির আভাস থাকায় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই সতর্ক করে দিয়েছিল প্রকাশকদের। এছাড়া মেলায় অংশ নেওয়া সব প্রকাশককেই বলা হয়েছে ‘ঝড়-বৃষ্টি ও অগ্নি-বীমা’ করতে। সবাই তা করেছেন। তাছাড়া বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকদের সামগ্রিক প্রস্তুতির ফলে এবারের বৃষ্টিতে বইমেলায় অন্যবারের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে।

রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমির মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত গ্রন্থমেলা বিষয়ক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির পরিচালক ও গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ একথা জানান।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যাণার্জীসহ একাডেমির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জালাল আহমেদ বলেন, প্রতিবছরই মেলার সময় এক বা দু’দিন বৃষ্টি হয়। সেদিকটা মাথায় রেখে আমরা এবার আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এছাড়া প্রকাশকদের আগে থেকেই ঝড়-বৃষ্টি ও অগ্নি-বীমা’ করতে বলা হয়েছে এবং তা সবাই করেছেন। সব মিলিয়ে ৯০ শতাংশ স্টল মালিক সতর্ক ছিলেন। ফলে তাদের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

কিছু স্টল মালিক স্টলে পুরনো টিন ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন। এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার সব টিন আমরা নতুন দিয়েছি। এছাড়া লটারি হওয়ার দিন (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্তও এ ব্যাপারে তারা কোনো কথা বলেননি।

এছাড়া বাংলা একাডেমির নিজস্ব স্টল, ইউপিএল ও অন্যপ্রকাশসহ কয়েকটি হাতে গোনা প্যাভিলিয়ন ও স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামীতে এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমি আরো সতর্ক থাকবে বলেও জানান তিনি।

একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এমন উন্মুক্ত একটি স্থানে, অস্থায়ী একটি কাঠামোতে ঝড়-বৃষ্টি শাসনে রাখাটা কঠিন। তারপরও আমাদের চেষ্টা থাকবে। আর আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখেও বৃষ্টির আশংকা রয়েছে। এটি মাথায় রেখে আমাদের পাশাপাশি প্রকাশকরাও যদি ব্যবস্থা নেন, তবে তা সবার জন্যই ভালো হবে।

এদিকে মেলার ১৬তম দিন পর্যন্ত সর্বমোট নতুন বই এসেছে ২ হাজার ৪৭৭টি। আর একই দিন পর্যন্ত বাংলা একাডেমি মোট ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার ১০৮ টাকার বই বিক্রি করেছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।