রাজধানীর ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বিভিন্ন সময়ের উচ্ছেদ অভিযানের পরক্ষণেই তা আবার বেদখল হয়ে যাচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযানের পরপরই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে ফুটপাতগুলো। রাজধানীর ফুটপাত বেদখলের বিষয়কে ঘিরে অভিযোগ রয়েছে – ফুটপাত থেকে কয়েক প্রতিমাসে কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। পুলিশ থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা এই চাঁদার ভাগ পেয়ে থাকেন। এ কারনেই কি ফুটপাত গুলোকে স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না।

এ কারনেই কোনো ভাবেই দখলমুক্ত হচ্ছে না রাজধানীর ফুটপাত। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হলেও দুই-এক দিনের মধ্যেই আবার ফিরে যাচ্ছে পুরনো চিত্রে। অথচ নগরবাসীর নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের সুবিধার্থে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল এই ফুটপাত। রাস্তার বেহালদশা আর দীর্ঘ যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। নগরীর ফুটপাতগুলো দখল করে চলছে ব্যবসা। এ অবস্থায় নগরবিদরা বলছেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নগর পিতাদেরই বের করতে হবে স্থায়ী সমাধান।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে কোনো দিনই ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে না। সব সময়ই সরকার দলীয় প্রভাবশালীরা টাকার বিনিময়ে ফুটপাত দখল করে ভাড়া দিচ্ছে। মূলত তাদের পকেটেই যাচ্ছে ফুটপাতের চাঁদাবাজির টাকা। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তাও এসব টাকার ভাগ পান।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নগরীর ২১৮ কিলোমিটার ফুটপাতের মধ্যে ১০৮ দশমিক ৬০ কিলোমিটার ফুটপাতই প্রভাবশালীদের দখলে। এ ছাড়া নগরীর ২ হাজার ২৮৯ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৫৭২ দশমিক ৪২ কিলোমিটারে বসানো হয় পণ্যের পসরা।

টাকা দিয়ে মিরপুর-১ নম্বরের ফুটপাতে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করেন – এমন বেশ কয়েক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থান ভেদে ফুটপাতের পজিশন বিক্রি হয়েছে ৮-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে বেশির ভাগ পজিশন বিক্রি হয় ১০ হাজারে। টাকা দিতে হয় ভ্যানগাড়ি বা ভ্রাম্যমাণ দোকানিদেরও। ফুটপাতের এক দোকানি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রসাশনের লোকদেরকেও টাকা দিতে হয়। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিনভর যানজট লাঘবের চেষ্টা করতে দেখা গেলেও বেদখল রাস্তা নিয়ে তারা নির্বিকার।

গত সপ্তাহে ডিএনসিসি কর্তৃক এক উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ৬০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও কয়েক দিনের ব্যবধানে আবারও বেদখল হয়ে গেছে ফুটপাতগুলো। মিরপুরের-১ নম্বরস্থ হযরত শাহ্ আলী (রহ) মাজার থেকে শুরু করে ১০ নম্বর গোল চক্কর থেকে পল্লবী পর্যন্ত এলাকার পুরো সড়কের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন দোকানিরা। এদিকে মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচামালের আড়ৎ সরিয়ে শাহ্ আলী মাজারের পেছনে নেয়া হলেও শেষ হয়নি বিরম্বনা বরং আরো বৃদ্ধিই পেয়েছে। মাজার মালিকানাধীন বিশাল বালুর মাঠ কাঁচা বাজারের আড়ৎ হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি মূল সড়ক এমনকি মাজারের বাউণ্ডারীর ভেতরের মাঠও ব্যাবহার করা হয় টাকার বিনিময়ে। ফলে মিরপুর মাজারের নিজস্ব প্রাঙ্গনটিও এখন রাত্রিকালীন কাঁচা বাজারে রুপ নিয়েছে।

মিরপুর এক নম্বর থেকে চিড়িয়াখানা, ১০ নম্বর, ১১ নম্বর ফুটপাতে রয়েছে এক সারি দোকান, আবার ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল সড়ক দখল করে আছে আরেক সারি দোকান। এ ছাড়া মিরপুর-১ নম্বরে শাহ আলী মার্কেট, ক্যাপট্যাল টাওয়ারের সামনে লেগুনা স্ট্যাণ্ড হিসেবে ফুটপাত সহ রাস্তা দখলে পথচারীদেরও পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। অথচ রাজধানীতে লেগুনা চলাচলে ডিএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মাজারের পেছন পার্শ্বে দিয়াবাড়ি মোড়ে মূল সড়ক দখল করে দিনরাত পার্কিং করে রাখা হয় বিপুল সংখ্যক গাড়ি। এ ছাড়া শত শত রিকশা-ভ্যানও পার্ক করে রাখা হয়েছে ফুটপাতে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজটের। স্থানীয় প্রশাসন যেন দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই রাস্তা দখল করে পার্কিং করা হচ্ছে বাসগুলো।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আমরা সবসময় সক্রিয় আছি। কিছু অস্থায়ী হকাররা ফুটপাতে বসার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয়। তবুও যদি কেও ফুটপাত দখল করে বসার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া অবৈধ পার্কিং এর বিষয়টির সমাধানে ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। এ ব্যপারে ট্রাফিক পুলিশকে আরও সক্রিয় ভুমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।