লেখক ও শিক্ষাবিদ হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার ১৫ বছর পার হলেও এখনো শেষ হয়নি বিচার। তবে মামলাটির রায়ের জন্য আরো দুটি ধাপ অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। আগামী ২১ মার্চ আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন নির্ধারণ করা আছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন হুমায়ুন আজাদ। পরের দিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। ওই হামলার পর তিনি ২২ দিন ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসারত ছিলেন।

ওই বছরের ১২ আগস্ট উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানি যাওয়ার পর সেখানেই মারা যান তিনি। এরপর এটি হত্যা মামলা হিসেবে রূপ নেয়।এ বিষয়ে ঢাকা মহানগরের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু সাংবাদিকদের জানান, হুমায়ুন আজাদ হত্যার ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা হয়। দুটি মামলার মধ্যে দন্ডবিধির একটি ও বিস্ফোরক আইনে আরেকটি। এর মধ্যে দন্ডবিধির মামলাটি শেষের দিকে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এ মামলার রায় ঘোষণা করা যাবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় দন্ডবিধির একটি মামলা শেষের দিকে রয়েছে, অন্য মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।২০০৭ সালের ১৪ নভম্বের সিআইডির পরিদর্শক কাজী আবদুল মালেক জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, আতাউর রহমান সানি, নূর মোহাম্মাদ সাবু ওরফে শামীম, মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগিনা শহিদকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।২০০৭ সালের ৩০ মার্চ ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যা মামলায় শায়খ আবদুর রহমান ও আতাউর রহমানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়।

সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান মামলাটির মূল তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনিই মামলাটি তদন্তের পর ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন জেএমবির শূরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। তাঁদের মধ্যে আসামি নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু পলাতক।২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের প্রিজনভ্যান থেকে এ মামলার দুই আসামি সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন ও রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহমুদকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে তাঁদের মধ্যে রাকিব ওই দিন রাতেই ধরা পড়েন এবং পরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।মামলায় মোট ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

এ মামলার উল্লেখযোগ্য সাক্ষ্যদাতারা হলেন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির, আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি ও ঘটনাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি অনার্সের ছাত্র আইনজীবী এস এম শফিকুর রহমান আশিক, হুমায়ুন আজাদের স্ত্রী লতিফা, কবি মোহন রায়হান এবং কবি ও সাংবাদিক নাসির আহমেদ।