বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচন। ছিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর পদের নির্বাচনও।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপ-নির্বাচনে ভোটাররা আগ্রহ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে না গেলেও কাউন্সিলর নির্বাচনে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। বিকাল চারটায় দুই সিটির ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। ভোট শেষে এখন চলছে গণনা। তবে মেয়র পদে বিরোধীদল থেকে শক্তিশালী কোনও প্রার্থী না দেওয়ায় উপনির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের আগ্রহ ছিল কম। দিনভর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজধানীর ভেতরের কেন্দ্রগুলোতে এমনই অবস্থা দেখে গেছে। যার প্রমাণ মিলেছে ভোটের বাক্সেও।

এ নির্বাচনে কোনো উত্তাপ ছিল না। এর কারণ হিসেবে ভোটার ও প্রার্থীরা মনে করছেন, বিএনপি অংশ না নেয়ায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। তাই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ভোটগ্রহণ চলাকালে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে মেয়রপদে নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দলগুলো এতে অংশ না নেয়ায় এটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নয়। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উৎসাহ দেখা যায় নাসংসদ ভবনের উল্টো দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট শেষে বাক্সগুলো থেকে পাওয়া ব্যালটের সংখ্যাও ছিল কম। ওপরের ছবিটি এই কেন্দ্রের আটটি ব্যালট বাক্স থেকে ঢালা ব্যালটের পরিমাণ দেখাচ্ছে। পরে অবশ্য আরও কয়েকটি বাক্সের ব্যালট ঢালা হলেও ভোটের পরিমাণ খুব বেশি ছিল না এখানে। শহরের ভেতরে অবস্থিত এই কেন্দ্রটিতে কাউন্সিলর নির্বাচন ছিল না। বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৮টি করে মোট ৩৬টি সম্প্রসারিত বা নতুন ওয়ার্ডে সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ওসমান গণি মারা যাওয়ায় তার ওয়ার্ডেও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রার্থী যারা: ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে পাঁচ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন– আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শাফিন আহমেদ (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) শাহীন খান (বাঘ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রহিম (টেবিল ঘড়ি)।

এদিকে, উত্তর সিটিতে যুক্ত হওয়া ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৬ জন এবং সংরক্ষিত ছয়টি ওয়ার্ডে ৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১২৫ জন ও সংরক্ষিত ছয়টি ওয়ার্ডে ২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রোদ দেখা দিলেও, দেখা মেলেনি ভোটারদের

ভোটকেন্দ্র ভোটার শূন্য: সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য। সকালে বৃষ্টি থাকার কারণে ভোটার কম বলে প্রার্থীরা দাবি করলেও রোদ ওঠার পরেও কেন্দ্রগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা ছিল। তবে যেসব এলকায় কাউন্সিলর নির্বাচন ছিল, সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে, নির্বাচনও হয়েছে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে।আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নিজেও একথা স্বীকার করেছেন। সকালে তিনি হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যা- কলেজে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এ কেন্দ্রে তুলনামূলকভাবে ভোটার কম। এখানে শুধু মেয়রের ভোট রয়েছে। যেসব এলাকায় কাউন্সিলরদের ভোট রয়েছে, তাতে উপস্থিতি ভালো হবে।

এদিকে, কেবল মেয়র নির্বাচন হচ্ছে এমন কেন্দ্রে ভোটার না থাকা নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসার দায় নির্বাচন কমিশনের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর এবং প্রার্থীদের।তিনি বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে দেই। রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা প্রার্থীদের ভোটার নিয়ে আসতে হয়। আমরা বলে দেই পরিবেশ সুষ্ঠু আছে, সবকিছু নিরাপদ আছে এবং সবাই ভোট দিতে আসতে পারে।

এদিকে বুধবার থেকে রাজধানীতে বৃষ্টি থাকায় ভোটার কম বলা হলেও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর নগরীতে রোদ ছিল, কিন্তু কেন্দ্রগুলোতে তেমন ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। বাংলা ট্রিবিউনের সরেজমিনে মিরপুর, উত্তরা ও বনশ্রীর বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে পুরোকেন্দ্র খালি।এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুলে দুপুর দেড়টার দিকে দেখা গেছে, সেখানে একজন ভোটারও নেই। রোদে ঝলমল স্কুলমাঠ লোকজন শূন্য। এই কলেজে ভোট কেন্দ্র চারটি। দুপুর দুটা পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোট পড়েছে একশোর কম। ভোটারের উপস্থিতি কম থাকায় গল্প করে সময় কাটছে নির্বাচনি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মেয়র নির্বাচনে ভোটার শূন্য কেন্দ্রের খবর এলেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্ধিত অংশগুলোতে ভোটকেন্দ্রগুলোর চেহারা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। মূলত, এসব এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর জন্য ভোট দিতে আসছেন তারা। দুই সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ৩৬টি ওয়ার্ডের চিত্র ছিল এমনই। এসব কেন্দ্রগুলো উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার। ওই এলাকার চারটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্সিলরের কর্মী-সমর্থকরা নির্বিঘ্নে কাজ করছেন। তাদের পরস্পর সহাবস্থানের মধ্যদিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও ভোটারের সংখ্যা কিছুটা কম। তবে মেয়র নির্বাচনের কেন্দ্রগুলোর চেয়ে এখানে উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। উত্তরা আনোয়ারা মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজের মহিলা কেন্দ্রে ছয়টি বুথ। মোট ভোটার ২৭১৩। এখানে সব দলের এজেন্ট ছিল। কাউন্সিলরদের এজেন্টদেরও দেখা গেছে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দেবাশীষ কর্মকার বলেন, ‘এই কেন্দ্রে সব এজেন্ট আছে। এখন পর্যন্ত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট গ্রহণ সম্ভব হয়েছে।

এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদের উপনির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নয়।’ বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে ভোটারদের ভোট দিতে যেতে উৎসাহ দেখা যায় না।