গাজীপুরের শ্রীপুরে মঙ্গলবার পাইপ লাইনে লিকেজের কারণে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে দু’সন্তানের জননী এক নারী শ্রমিক। এসময় আগুনে টিনসেডের ঘর ও মালামাল পুড়েছে। নিহতের নাম সেলিনা আক্তার (৩৫)। তিনি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের নুরুল হকের মেয়ে। এদিকে একইদিন জেলা শহরের একটি মার্কেটে ইলেকট্র্রনিক্স দোকানে পৃথক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে প্রায় কোটি টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী পুড়ে গেছে।

শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন অফিসার আল আমিন ও স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুর পৌর সভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির গিলারচালা এলাকার শহিদুল ইসলামের বাড়ির টিনসেড ঘরে দু’সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থেকে সেলিনা আক্তার স্থানীয় একটি জুতা তৈরির কারখানায় চেকার পদে চাকরি করতেন। তার স্বামী আজাদ দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করায় সেলিনা এ কারখানায় চাকরি নেন। মঙ্গলবার ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে সেলিনা কারখানায় যাওয়ার জন্য রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি দিয়াশলাই জ্বালিয়ে চুলায় আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন লেগে মুহুর্তেই পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। চ’লার সঙ্গে সিলিন্ডারের সংযোগ পাইপ লিকেজের কারনে গ্যাস পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় বিকট শব্দে সিলিন্ডারের একটি অংশ বিষ্ফোরিত গ্যাস বেরোতে থাকলে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে পার্শ্ববর্তী আরো ৫টি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার সময় বাড়ির অন্যান্য লোকজন বের হয়ে আসতে পারলেও সেলিনা আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। খবর পেয়ে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে প্রায় আধা ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এসময় তারা ঘটনাস্থল থেকে সেলিনা আক্তারের পুড়ে যাওয়া অঙ্গার দেহ উদ্ধার করেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখান থেকে আংশিক বিষ্ফোরিত একটি গ্যাস সিলিন্ডার এবং অপর একটি গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। আগুনে ওই বাড়ির টিনসেডের ৬টি ঘর ও মালামাল পুড়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, সিলিন্ডারের সঙ্গে চ’লার সংযোগ পাইপ লিকেজ হয়ে গ্যাস বের হয়ে পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এছাড়াও অগ্নিকান্ডের সময় বিষ্ফোরিত হয়ে একটি সিলিন্ডারের একাংশ ফুটো হয়ে গ্যাস বেরিয়ে পড়ে। আর এ কারণে অতি সহজেই আগুন পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আগুনে আসবাবপত্র ও মালামালসহ ওই বাড়ির টিনের তৈরী ৬টি ঘর পুড়ে গেছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিহতের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে একইদিন ভোরে গাজীপুর জেলা শহরের একটি ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে মার্কেটের একটি দোকানের টিভি, ফ্রিজ ও কম্পিউটারসহ প্রায় কোটি টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী পুড়ে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। ঘটনার সময় জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের জন্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌছতে দেরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে গাজীপুর জেলা শহরের জয়দেবপুর বাজারের মসজিদ রোডের আকন্দ ম্যানসনের মেসার্স রাজু এন্টারপ্রাইজ নামের ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক্স এর দোকান অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভায়। অগ্নিকান্ডে ওই দোকানের টিভি, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ওভেনসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়েছে ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

ওই দোকানের মালিক মোঃ আশরাফুল ইসলাম জানান, অগ্নিকান্ডে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দোকানে টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, ওভেন, গ্যাসের চুলাসহ বৈদ্যুতিক বিভিন্ন সামগ্রী ছিল।

জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের জন্যে ফায়ার সার্ভিস দলকে ঘটনাস্থলে পৌছতে দেরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে ওভারব্রীজ না থাকায় গাজীপুরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। অপরদিকে ফায়ার সার্ভিস,এম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহন রেলক্রসিংয়ে আটকা পড়ে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটনা বেড়েই চলছে।

ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ঘটনাস্থলটি জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের কাছাকাছি হলেও জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের জন্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌছতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ঘটনার সময় জয়দেপুর রেলওয়ে জংশন এলাকায় দুইটি ট্রেন ক্রসিং হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদেরকে রেলক্রসিং পয়েন্টে অন্ততঃ ১০/১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ফলে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি বেশী হয়েছে। এমনিভাবে বিভিন্ন দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে প্রায়ই জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে আটকা পড়ে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়।এতে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেড়ে যাচ্ছে।