৫০০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি করায় ৯ মাসে ৯ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) হারুন উর রশীদ।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিইআরসিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উপর গণশুনানিতে এমন মন্তব্য করেন তিনি। পেট্রোবাংলার পরিচালক বলেন, মুনাফা করতে চাইনা, নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে চাই, আপনারাও চান। সেই কারণে আমদানি করতে হচ্ছে। আর আমদানি করতে হলে দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।

দেশীয় তেল-গ্যাস আহরণে সেভাবে কাজ না হওয়া প্রসঙ্গে হারুন উর রশীদ বলেন, দক্ষ লোকবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সাগরে তেল-গ্যাস আহরণে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। আমরা চাচ্ছি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে। কিন্তু আমাদের মডেল পিএসসির দাম আকর্ষণীয় নয়। সেই কারণে সংশোধনীতে দাম আকর্ষণীয় করা হচ্ছে।

দুর্নীতির কারণে জ্বালানির দাম বাড়ে- ভোক্তাদের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম-সচিব জহির রায়হান বলেন, একদিনে বিপ্লব করতে পারবো না। একটু একটু করে এগিয়ে যেতে পারলে ভালো। দুর্নীতি অনেকের মজ্জাগত দোষে পরিণত হয়েছে।

শুনানিতে অংশ নিয়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভারশন ওয়ার্কস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর ভূইয়া বলেন, ৩২ টাকা থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪৮ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর প্রভাব কী হতে পারে আপনারা ভাবছেন না। এই ঢাকায় এক সময় কালো ধোঁয়ায় থাকা যেত না। সেই কারণে সিএনজিতে যাওয়া হয়। এখন বলা হচ্ছে তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

একবারও কি ঢাকার পরিণতির কথা ভেবেছেন? দাম বেড়ে গেলে গাড়ি ভাড়া বেড়ে যাবে। এতে অরাজকতা দেখা দিতে পারে। দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম তিন দশমিক ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৭৪ টাকা,সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ১০ টাকা, প্রি-পেইড মিটারে ৯ দশমিক ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ৪১ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আবাসিকে এক চুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৪০ টাকা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার দুই দশমিক ৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে আট দশমিক ৪৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯ দশমিক ৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ দশমিক শূন্য ৪ টাকা, শিল্পে সাত দশমিক ৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪ দশমিক শূন্য পাঁচ টাকা, বাণিজ্যিকে ১৭ দশমিক শূন্য চার টাকার পরিবর্তে ২৪ দশমিক শূন্য পাঁচ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী ও বাম রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ভোক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার লোকজন অংশ নিয়ে দাম বাড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করেন। বিকালে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাবের উপর শুনানি হবে।

এদিকে টিসিবি ভবনের দুইতলায় যখন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানি চলছিল। তখন নিচে মূল ফটকের সামনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বিইআরসির ইট খুলে নেওয়ার হুমকি দেন।

এদিন বিইআরসির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। অন্যদিনের তুলনায় বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন দেখা গেছে। আইনানুযায়ী শুনানির তিন মাসের মধ্যে আদেশ দেবেন বিইআরসি।