ফারমার্স নামের অতীতের ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে গ্রাহকদের জন্য ‘নিরাপদ ব্যাংক’ গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে যাত্রা শুরু করল ‘পদ্মা ব্যাংক’। শনিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক জমকালো অনুষ্ঠানে পদ্মা ব্যাংকের লোগো উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লা আল মাসুদ, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম আজাদ, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস উল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক।

ফারমার্স ব্যাংক নামে ছয় বছর আগে যাত্রা শুরুর পর ধুঁকতে থাকলে বেসরকারি এই ব্যাংকটিকে পতনের হাত থেকে বাঁচাতে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক ও আইসিবি অংশীদার হয়ে পাশে দাঁড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় নাম বদলে নতুন রূপে যাত্রা শুরু হল তার।

এই ব্যাংকটির মূলধনের ৬৮ শতাংশ এখন জোগান দিচ্ছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংক এবং আইসিবি।

মসিউর রহমান বলেন, শক্তিমান বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিপরায়ন দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু সেই মঞ্চেই আমরা সারা পৃথিবীর সামনে দুর্নীতিমুক্ত বলে প্রমাণ করেছি।

পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়েই এ ঘটনা ঘটেছিল। এখন সেই পদ্মার নামে ব্যাংক করছেন। তাই পদ্মার সেই কথা স্মরণ করে পদ্মা ব্যাংককেও গ্রাহকদের কাছে দুর্নীতিমুক্ত বলে প্রমাণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রায় সব ব্যাংককেই টাকার অভাব, পুঁজির অভাব। সরকারের টাকা দিয়েই সেই অভাব পূরণ করতে হচ্ছে।

কিন্তু একই সাথে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সম্পদের অভাব নেই। অনেকে সম্পদ আমরা দেশের ভেতরেও পাচ্ছি না। তার ব্যবহার নাই দেখে সেটা বাইরে নিয়ে যায়। সেই সম্পদগুলো আমাদের ব্যবহার করা উচিৎ। তাহলে আমাদের ব্যবহারযোগ্য-বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ অনেক বাড়ে।

পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ব্যবসায় জগতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও আমন্ত্রিত ছিলেন।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, “দেশের একটি সরকারি ব্যাংকের ক্রাইসিস তৈরি হওয়ার আমরা সরকারের চারটি ব্যাংক ও আইসিবি এগিয়ে এসেছি।ব্যাংকটিতে এখনও এক হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে। দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো সবাই ২০ কোটি টাকা করে দিলেই এই মুলধন সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।

অংশীদার অন্য ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরাও পদ্মা ব্যাংককে একটি নিরাপদ ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান খসরু ‘নিরাপদ ব্যাংক’ হিসেবে পদ্মা ব্যাংককে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষার কথা জানান।

আমরা ফারমার্স ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ে অত্যন্ত বদনামের মুখে পড়েছিলাম। এখন সরকারের অন্যান্য ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে সফলতার নতুন রাস্তায় উঠতে নাম পরিবর্তন করে কার্যক্রম শুরু করেছি।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের আমানতকারী ও শেয়ার হোল্ডারদের নিরাপদ সফল ব্যাংকিংয়ের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। একইসঙ্গে আমি আগামী এ বছরের মধ্যে আমাদের মন্দ ঋণ ৪০ শতাংশে নামিয়ে আসবে বলে আশা করছি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মসিউর রহমান বক্তব্যে মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে ক্ষমা করে দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান, যার অধীনেই ফারমার্স ব্যাংকে যাত্রা শুরু হয়েছিল।

২০১৩ সালে ফারমার্স ব্যাংকের যাত্রা শুরুর সময় থেকে এর চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, সাবেক আমলা মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মে তিন বছরের মধ্যে ধুঁকতে থাকে ব্যাংকটি। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক বসিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর চাপের মুখে গত বছরের শুরুতে চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে হয় এর প্রতিষ্ঠাতা মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে।

ফারমার্স ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়মের জন্য ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতাদের দায়ী করে আসছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তবে মসিউর রহমান তার আমলা জীবনের সহকর্মী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কথা স্মরণ করে বলেন, পাকিস্তান আমলে সিভিল সার্ভিসের শিক্ষা যখন গ্রহণ করি, তখন বক্তৃতা দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পামন্ত্রী এবং পরিকল্পনা কমিশনের প্রধানসহ বড় বড় কর্মকর্তারা আসতেন। তখন দেখেছি মহীউদ্দীন খান আলমগীর তাদের নাজেহাল করে দিতেন যে কীভাবে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ পাকিস্তানে স্থানান্তর করা হয়। তাদের কোনো উত্তর থাকত না।

তার এই আলোচনা সরকারি চাকরি থেকে তাকে বহিষ্কারের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তাকে বহিষ্কার করে নাই। বরং তার এসেমেন্টে লেখা হত যা তার বাংলা হচ্ছে, ‘সে স্ফূলিঙ্গের মতো, অতি সযতেœ তাকে লালন করতে হবে’।

ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক সহকর্মীকে দায়মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মসিউর বলেন, সে যদি দোষ করে থাকে, সে দোষের ঊর্ধে। তার ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক ট্রাজেডি হয়েছে। তার দুটি ছেলে ছিল একটি ছেলে মারা গেছে।