চলতি বছরের এপ্রিলে রাজধানীর ধানমন্ডি, মতিঝিল ও উত্তরায় তিনটি সার্কুলার (চক্রাকার) বাস লাইন চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগরের পুলিশ(ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও সিগন্যালে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় ৫ম বারের মতো ট্রাফিক সপ্তাহ উদ্বোধনকালে একথা বলেন তিনি। এই ট্রাফিক সপ্তাহ চলবে ২৩ মার্চ (শনিবার) পর্যন্ত।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি সিটি কর্পোরেশন, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, বিআরটিসি সকলের সাথে সমন্বয় করে আরও তিনটি সার্কুলার বাস লাইন চালু করব। একটি ধানমন্ডিতে, মতিঝিলে ও আরেকটি উত্তরায়। গুলশানে একটি চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু আছে। ইতিমধ্যে এ সার্ভিস চালুতে এলাকাবাসী সুফল পেয়েছে। আশা করছি নতুন এলাকাগুলোতে সার্কুলার (চক্রাকার) বাস চালু করা হলে এলাকাবাসী সুফল পাবে।

ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থার দৃশ্যপট দ্রুত বদলে যাবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন: ঢাকা শহরের সমস্ত বাস ছয়টি কোম্পানির মাধ্যমে চলবে। এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পদ্ধতি কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। চলমান এমআরটি বিআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজ চলমান রয়েছে। এটি আগামী দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন হলে বদলে যাবে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা দৃশ্যপট।

পঞ্চমবারের মতো ট্রাফিক সপ্তাহ উদ্বোধন করে ডিএমপি কমিশনার বলেন: জনগণ যাতে ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস ব্যবহার করে, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করে, যত্রতত্র চলন্ত গাড়ীর সামনে দিয়ে যাতে ঝাপ দিয়ে দুর্ঘটনার শিকার না হয় সেজন্য আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো ব্যাপকভাবে চালাবো। ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগরীতে আমরা ১৫০টি বাসস্টপেজ চিহ্নিত করেছে। বাস স্টপেজ শুরু ও শেষ সিগন্যাল আমরা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমি চালক ভাইদের প্রতি অনুরোধ করব বেশি গতিতে গাড়ী চালাবেন না। ওভারটেক করে অহেতুক দুর্ঘটনা সৃষ্টি করবেন না। ইন্টার সেকশনের আগে পরে গাড়ীগুলোকে বামপামে রাস্তা চেপে দাড় করাবেন। যাতে ট্রাফিক ফ্লো ঠিক থাকে। এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজ পর্যন্ত দরজা বন্ধ রাখবেন। যত্রতত্র যাত্রী উঠিয়ে ও পাল্লা দিয়ে গাড়ী চালিয়ে অহেতুক প্রাণ কেড়ে নিবেন না। মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানো ফৌজদারি অপরাধ। এটি কোনো চালক করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করবো।

মালিকদের প্রতি আমার অনুরোধ, গাড়ীর কাগজপত্র ঠিক রাখুন। ফিটনেসবিহীন গাড়ী রাস্তায় নামাবেন না। চালকদের মাসিক ভিত্তিতে ঠিকাদারি পদ্ধতিতে গাড়ী চালাতে দেবেন না। তাহলেই অধিক লাভের লোভে দুর্ঘটনা ঘটবে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে অবশ্যই আইন প্রয়োগ করবো, প্রসিকিউশন দিবো, প্রয়োজনে জরিমানা করবো।

পথচারীদের নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপারের অনুরোধ করে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন: দুর্ঘটনার মূল কারণে পথচারী। পথচারীরা কোনো আইন মানবে না। ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস, জেব্রা ক্রসিং থাকার পরেও চলন্ত গাড়ীর সামনে দিয়ে ঝাঁপ দেবে। এমন কি রোড ডিভাইডারের যে তারের কাটা আছে, বাচ্চা কোলে ব্যাগেজ নিয়ে রাস্তা পারাপার হয়, দুর্ঘটনা ঘটে।মোবাইলে কথা বলতে বলতে এয়ারফোন কানে দিয়েও পথচারীদের রাস্তা পার হতে দেখি। এসব বন্ধ করতে হবে।

সকল নাগরিককে অনুরোধ করব আপনারা দেশের ট্রাফিক আইন মানুন, তাহলেই ট্রাফিক সহনশীল পর্যায়ে আসবে। নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে। বিশেষ করে সমাজের জ্ঞানী গুণী মানুষ, পেশাজীবী, সরকারি আমলা, সাংবাদিক, আইনজীবি সবাই আইন মানুন, ট্রাফিক আইন অন্যকেও আইন মানতে উৎসাহিত করুন।

উল্টো পথে গাড়ি চলাচল ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কমানো গেছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন: অনেক ক্ষমতাশালী, প্রভাবশালীর বিরুদ্ধেও আমরা আইনী ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করি নি। উল্টো পথ বাদেও স্টিকার লাগিয়ে সিগন্যাল অমান্য, হাইড্রোলিক হর্ণ, বিকন লাইট ব্যবহার করা হতো এগুলো কমানো সম্ভব হয়েছে। যিনিই ট্রাফিক আইন অমান্য করবেন, জনগণের দুর্ভোগের কারণ হবেন, যানজট বাড়িয়ে দেবেন, তিনি যেই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে আমরা আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করবো।

কমিশনার বলেন, যানজট কমাতে ও ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় সিটি কর্পোরেশন, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, বিআরটিসি সকলের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। রোড মার্কিংগুলো আমরা সিটি কর্পোরেশনের সহযোগীতায় করেছি। কিছু বাকি আছে। সেগুলোও আমরা সম্পন্ন করবো।

আমরা মতিঝিল, এলিফেন্ট রোড, ঢাকা কলেজ, বেইলী রোড, নিউ মার্কেট এলাকার অবৈধ দখল, ফুটপাত উচ্ছেদ করেছি। প্রত্যেকটি এলাকায় ক্রমান্বয়ে অবৈধ দখল ও ফুটপাত উচ্ছেদ করা হবে। দোকানের অতিরিক্ত জায়গা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। রাস্তায় ফুটপাতে কোনো মালামাল রাখা যাবে না।

কমিশনার আরো বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ করে কিংবা জরিমানা করে সড়কে শৃঙ্খলা আনা যাবে না। এই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে সকলের সহযোগীতা ও সচেতনতা দরকার।