চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদ (এনইসি)। মূল এডিপি থেকে বৈদেশিক সহায়তা অংশে ৯ হাজার কোটি টাকা কাঁটছাট করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি তহবিলের অংশে এক হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপির নতুন আকার নির্ধারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সেখানে সংশোধিত নতুন এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়।

পরে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম, এ, মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন।

ব্রিফিং এ জানানো হয়, মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) আকার ছিল স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার বরাদ্দ ছাড়া ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশে বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫১ হাজার কোটি টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পের তদারকি নিশ্চিত করতে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে, আইএমইডির বিভাগীয় অফিস স্থাপন, জনবল ও যানবাহন বৃদ্ধি, কারিগরি প্রকল্পের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব গঠন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ফসলী জমি বা জলাধার ব্যবহার করা যাবে না। প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার তিন মাসের মধেই পিসিআর বা প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে প্রকল্পের গাড়ী, অফিস ও অন্যান্য সরঞ্জাম যথাস্থানে জমা দিতে হবে। প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশেই যারা অবসরে গিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে পরামর্শক নিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে।

এছাড়া, প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে এবং একটি প্রকল্পের জন্য একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করতে হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কারিগরি লোক পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে অনুমোদন সাপেক্ষে দুটি বা তার বেশি প্রকল্পে একজন পিডি থাকতে পারবেন। এনইসিতে আইএমইডি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১৫টি সমস্যা তুলে ধরেছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

অন্যদিকে, সরকারি তহবিলের (জিওবি) অংশে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে এক হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। তবে, এসবের বাইরে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নসহ মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ৮ হাজার ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরে মোট সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭১ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সংশোধিত এডিপিতে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রকল্পসহ মোট বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৯১৬টি। মূল এডিপিতে মোট প্রকল্প সংখ্যা ছিল ১৪৫১টি প্রকল্প। সংশোধিত প্রকল্পে বাড়ছে ৪৬৫টি। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে ৯৮৭টি নতুন প্রকল্প অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে ২৫৬টি বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সংশোধিত এডিপিতে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বরাদ্দ হচ্ছে, সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকুলে ২৪ হাজার ৪৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এছাড়া, বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পেয়েছে ১৯ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।

এছাড়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় ৪২৯ কোটি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১৬৩ কোটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৯৮৩ কোটি, তথ্য মন্ত্রণালয় ২৩১ কোটি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৯৮ কোটি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২০৫ কোটি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৩২১ কোটি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ১ হাজার ৭৪৫ কোটি, শিল্প মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮৭ কোটি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৭১২ কোটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২ হাজার ১২৯ কোটি, কৃষি মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮০৬ কোটি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৭৭৫ কোটি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ৫২৪ কোটি, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬৩৪ কোটি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৮৫৯ কোটি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৬৪৫ কোটি, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৯১৫ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭ হাজার ৯২৫ কোটি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৮৯৪ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২১ কোটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮৪৫ কোটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পাচ্ছে ৫৪১ কোটি টাকা।

জাতীয় সংসদ সচিবালয় ৭৩ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২ হাজার ৭৩ কোটি টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ১ হাজার ৪১০ কোটি টাকা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, সরকারি কর্ম কমিশন ৪৪ কোটি টাকা,অর্থ বিভাগ ৪৩৪ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৩৫৭ কোটি টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৫৫ কোটি টাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৪০ কোটি টাকা, পরিকল্পনা বিভাগ ১৫৬ কোটি টাকা, আইএমইডি১০৪ কোটি টাকা, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৫৫১ কোটি টাকা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৮৪ কোটি টাকা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬৬ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, আইন ও বিচার বিভাগ৪৭২ কোটি, জননিরাপত্তা বিভাগ ১হাজার ৫৫৬ কোটি , সুরক্ষা সেবা বিভাগ ২ হাজার ১৪ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ৮৩৯ কোটি ,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১ হাজার ১২২কোটি টাকা এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।