বাসচাপায় বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহম্মেদ চৌধুরী নিহতের ঘটনায় উত্তাল রাজধানী ঢাকা। সকালে কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপস্থিতি বাড়ে। রাজধানীর প্রায় প্রত্যেকটি এলাকায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়।

এদিকে,আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সব কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনকারীরা তাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী তৌহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আজ আমরা ছাত্রদের নিয়ে মেয়রের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছি। সময় সাপেক্ষে মেয়র সাহেব আমাদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন। আমরা বলেছি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে এই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট দিতে হবে। মেয়র বলেছেন, তিনি সেই ব্যবস্থা করবেন। দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন।

তিনি আরও বলেন, সড়ক নিরাপত্তার জন্য যেখানে যা করা দরকার তার জন্য আগামী সাতদিনের মধ্যে একটা পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন মেয়র এবং পরবর্তী এক মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবেন। এছাড়া স্টুডেন্ট কাউন্সিলের কথাও বলেছেন তিনি। এজন্য আমরা পরবর্তী সাত দিন সময় দিচ্ছি। আগামী ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার মেয়রের সঙ্গে আবার আমাদের বৈঠক হবে। তাই আজ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত সব ধরনের আন্দোলন আমরা স্থগিত করছি।

নিরাপদ সড়কের বিষয়ে কথা বলতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কার্যালয়ে যায়। বুধবার দুপুর ১টার দিকে তারা প্রগতি সরণির সামনে থেকে ডিএনসিসি কার্যালয়ে যান। পরে দেড়টার দিকে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) উপাচার্য মেজর জেনারেল এম এমদাদুল বারীসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, দেশে দ্বিতীয় দফা সড়ক আন্দালনের দ্বিতীয় দিনে সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, আজ বসুন্ধরা এলাকার প্রগতি সরণি, মিরপুর, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা কিছু এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মগেট, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে। নিরাপদ সড়কের লক্ষ্যে ৮ দফা দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে। কোন কোন এলাকায় গতবছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত প্রথম দফা সড়ক আন্দালনের মতো শিশু-কিশোররাও রাস্তায় নামে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কলেজের শিক্ষার্থীরাও আজ সড়কে নেমেছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক গেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তারা।

ফলে প্রগতি সরণিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে সকাল থেকেই বসুন্ধরা আবাসিক গেট এলাকায় জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে সাড়ে ৯টার দিকে তারা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শু রু করেন। শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে এ রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ব্যস্ততম সংযোগ সড়ক ফার্মগেট মোড়ে সকাল ৯টা থেকেই অবস্থান নেয় এলাকার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বাস আটকে দেয়।

আন্দোলনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দাবি আদায়ে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ আবারও সড়কে অবস্থান নিয়েছে। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শিক্ষার্থীরা বিচার চাই’, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমাদের দাবি মানতে হবে’ নানা স্লোগান দেন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পাশেই অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নেয়।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি ২৭ এর মোড়ে মিছিলসহ এসে সড়ক অবরোধ করে। এছাড়া ইউনিভার্সিটির সামনেও অবস্থান নিয়েছে শতশত শিক্ষার্থী। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাসে বাসে উঠে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করছে, হাফ ভাড়া নেয়া হয়েছে কিনা। সেই সঙ্গে গাড়িতে লেখা ‘হাফ পাশ নাই’ স্টিকার ছিড়ে ফেলছে। এ সময় তারা বাস চালকের লাইসেন্সও চেক করছে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। রায়সাবাজার মোড়ে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সড়ক আন্দালনের কারণে মিরপুর থেকে বিভিন্ন রুটের বাস কম সংখ্যায় চলাচল করছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রগতি সরণি এলাকায় সুপ্রভাত (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫) বাসের চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর শিক্ষার্থী আবরার আহম্মেদ চৌধুরী নিহত হন। পরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ৮ দফা দাবি ঘোষণা করেন এবং বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেন।