রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় যে স্থানটিতে বাসের চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থীর আবরার আহমেদ চৌধুরী প্রাণ হারিয়েছিলেন, ঠিক সেখানেই তার নামে তৈরি হচ্ছে ফুটওভারব্রিজ।

দুর্ঘটনার পরদিন বুধবার (২০ মার্চ) সকালে এই ফুটওভারব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এসময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

এসময় মেয়র জানান, ফুটওভারব্রিজটিরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য আবরারের বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফ আহাম্মেদ চৌধুরীকে অনুরোধ করা হলেও তিনি আসতে পারেননি।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যে বাসটি এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে এরই মধ্যে বাসটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এই চালকের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পাদন করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি বিধান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে।

দফায় দফায় ট্রাফিক সপ্তাহ, ট্রাফিক মাস পালনের মাধ্যমে সড়ককে নিরাপদ করার সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুরোপুরি সফল না হলেও এখন পরিস্থিতি অনেক ইমপ্রুভ করেছে। বাসচালক ও মালিকদের দায়িত্ব কী, সেটি আমরা জানি এবং তাদের বলা হয়েছে। এখন আমরা কঠোর আইন প্রয়োগে যাব। কোনো বাস সড়কে যেকোনো স্থানে চলাচল করলে, পেছনের বাসকে ধাক্কা দিলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বদ্ধ পরিকর।

আছাদুজ্জামান মিয়া আরও বলেন, সড়ক নিরাপদ করতে ফুটওভারব্রিজ, ইউলুপ, আন্ডারপাস প্রভৃতি নির্মাণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যুক্ত। আমরা সবাই মিলে দুই মেয়রের নেতৃত্বে (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি মেয়র) সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি। পরিবহনগুলো যেন যত্রতত্র না দাঁড়ায়, বেপরোয়াভাবে না চালায়, সে কারণে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব বাস কোম্পানিকে ছয়টি কোম্পানির মধ্যে রূপান্তরিত করা হবে। আজও দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে বৈঠক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে, যেকোনো মূল্যে বেপরোয়া যানচলাচল বন্ধ করতে হবে।দুয়েকদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে অগ্রগতি দেখতে পাবেন।

ডিএমপি প্রধান আরও বলেন, সড়ক নিরাপদ করতে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু মেগা প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়েছে। নির্মাণ কাজের জন্য যানজট কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে গেলে আমূল পরিবর্তন আসবে। ঢাকা শহরের চেহারা পাল্টে যাবে। এই ঢাকা শহরকে আর চেনা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসব কাজের দেখভাল করছেন। আর আমরা দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

শিক্ষার্থীদের চেঞ্জমেকার অভিহিত করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার। এক্ষেত্রে পথচারীরাও আইন মানতে চায় না। এটা বড় সমস্যা। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে বলব— আপনারাই পারেন, আপনারা সবাই চেঞ্জমেকার। পথচারীরা যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত বাসের সামনে দিয়ে না যায়, সেটাও দেখতে হবে। আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।