যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে সড়কে প্রত্যেক বছর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, এগুলোকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সড়কে প্রতিবছর মৃত্যূর সংখ্যা বাড়ছে।

শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সড়কে নৈরাজ্য বন্ধ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে গণফোরাম। এতে কামাল হোসেন বলেন, সুশাসনের অভাবে প্রতিদিন সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। দেশে আইনের কার্যকর প্রয়োগের ব্যবস্থা নেই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু পুলিশ যদি অন্যভাবে প্রভাবিত হয়ে পরিচালিত হয় তখন শাসনব্যবস্থা ও আইন দুর্বল হয়ে পড়ে। দেশে এখন আইন মেনে চলা তো দূরের কথা, আইন অমান্য করা মহামারিতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকবার দুর্ঘটনার পর সরকার বলে- যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু পরে তা নেওয়া হয় না। এই কারণে প্রতিবছর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই দুর্ঘটনারোধে সব রাজনৈতিক পক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন। লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, বিতর্কিত পরিবহন শ্রমিক নেতাকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রধান করে গোটা জাতির সঙ্গে তামাশা করেছে সরকার।

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের প্রধান কারণ রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে থাকেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তারা চাঁদাবাজির স্বার্থে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখেন। প্রকাশ্যে প্রতিদিন গণপরিবহন থেকে কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয় যার ভাগ বহুদূর পর্যন্ত যায়।

পরিবহন নৈরাজ্যের দায় বিআরটিএ এড়াতে পারে না উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে সুশাসনের অভাব ও লোকবল সংকট রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ৮৩২টি পদের মধ্যে এখনও ২৫০টি পদ খালি রয়েছে। ফলে সামান্য লোকবল দিয়ে সারাদেশে যানবাহনের সুষ্ঠু তদারকি করা সম্ভব নয়। বিআরটিসি হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন দেশে থেকে নিম্নমানের বাস কিনেছে অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে আমসা আমিন বলেন, একপর্যায়ে অনেক মূল্যে কেনা গাড়িগুলো অকেজো হিসেবে ডাম্পিং হয়ে যায়।

শহরের রাস্তার ৭০ ভাগ প্রাইভেট গাড়ি ও রিকশার দখলে দাবি করে গণফোরামের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এ কারণে গণপরিবহনগুলো ঠিকমতে চলতে পারে না। আবার ঢাকা মহানগরে রাস্তার পরিমাণ ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কে দুর্ঘটনা রোধে এবং নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পরিহনের জন্য রেল ও নৌপথের উন্নয়ন জরুরি বলেও মনে করে গণফোরাম।নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবির সঙ্গে গণফোরাম একমত বলে উল্লেখ করেন আমসা আমিন। এছাড়া লিখিত বক্তব্যে দলটির পক্ষ থেকে ১৪টি দাবিও উত্থাপন করা হয়। উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো- গণপরিবহন ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করা, সড়ক দুর্ঘটনায় দোষী চালক ও মালিকের শাস্তি নিশ্চিত ও সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা।

এসব দাবি বাস্তবায়ন ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী ১ এপ্রিল বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণফোরাম মানববন্ধন করবে বলেও জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ।