রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশ চালানোর কথা ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু চালাচ্ছে প্রশাসন এমন পর্যবেক্ষণ রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।

তিনি বলেন, কিছু নেই এই দেশের, কিছু নেই এখন আর। এখন সম্পূর্ণভাবে মিথ্যার ওপরে, প্রচারণার ওপরে, রাষ্ট্রের সমস্ত স্তম্ভগুলোকে ভেঙে দিয়ে, সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে সরকার তার ওপরে রাজত্ব করছে। আপনারা দেখুন, বিচার বিভাগ শেষ করে ফেলেছে, আইন বলতে কিছু নেই, রাষ্ট্রীয় যে প্রতিষ্ঠান, তা ধ্বংস করে দিয়েছে।

এখন তো রাজনৈতিক দলের এই রাষ্ট্র পরিচালনা করার কথা ছিল, আওয়ামী লীগের এই রাষ্ট্র পরিচালনার কথা, কিন্তু আওয়ামী লীগ কি রাষ্ট্র পরিচালনা করছে? করছে না। এখন প্রশাসনকে দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।স্বাধীনতা মাসে বন্দি গণতন্ত্র, বেগম খালেদা জিয়ার অমানবিক কারাবাস, অসহায় বিচার ব্যবস্থা— কোন পথে বাংলাদেশ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখেছেন। কারা করেছে, কীভাবে করেছে আমরা সবাই জানি। তাদেরকে এই আওয়ামী লীগ সরকার বেতন বাড়াচ্ছে। সরকারি কর্মচারী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব এবং সিভিল প্রশাসনে যারা আছেন, তাদের বেতন বাড়ছে। কিন্তু জনগণের আয় বাড়ছে না। উপরন্তু তাদের ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে বেশি করে। একই সঙ্গে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গ্যাস, তেল, পানি, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেলের দাম প্রতি বছর দুইবার তিনবার করে বাড়ানো হচ্ছে।

মানুষের ওপর নির্যাতন ও পকেট খালি করে বর্তমান সরকার টিকে আছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মেগাপ্রজেক্টের টাকা কোথা থেকে আসছে? এই টাকা আসছে জনগণের পকেট থেকে। বিদ্যুতের পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে করা হয়েছে। এমনকি দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির জন্য তাদেরকে আইনগতভাবে ইমডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাদের দুর্নীতির কোনো বিচার করা যাবে না, কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।

প্রধানমন্ত্রীর মুখে বাকশালের প্রশংসায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যারা বয়ষ্ক তারা দেখেছি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় যখন ব্যর্থ হতে শুরু করল, যখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হলো তাদের দুর্নীতির কারণে, হাজার হাজার মানুষ না খেতে পেরে যখন মারা গেল তখন তারা বিরোধীদের নির্মূল করতে প্রথমে বিশেষ ক্ষমতা আইন, তারপর জরুরি অবস্থা জারি করল।

তিনি বলেন, তারপরও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তখন তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছে। সেই বাকশালের পেছনে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য ছিল না। বাকশালের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার। ক্ষমতাকে ধরে রাখার। আজকে বলা হচ্ছে, এটা অত্যন্ত ভালো একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল

কখন বলছেন? যখন ইলেকশন কমিশন বলছে ভোট ভালো হচ্ছে না। যখন সিইসি বলছেন, আমরা জনগণকে ভোটে আনতে পারছি না। ঠিক তখন আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বাকশালের প্রসংশা করছেন। অর্থাৎ অপকর্মগুলোকে আড়াল করার জন্য আবার আপনি একদলীয় শাসনের আওয়াজ তুলতে শুরু করেছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সাল আর ২০১৯ সাল এক নয়। সুতরাং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে রাজত্ব চিরস্থায়ী করার যে স্বপ্ন আপনি দেখছেন, এই দেশের জনগণ কোনোদিন সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেবে না বলেন মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক হোসন খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহম্মদ আবু জাফরসহ অন্যরা।