আজ ৩ এপ্রিল, ২০১৯, বুধবার, বেলা ১২টায় গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে গ্যাসের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির অপতৎপরতা বন্ধের দাবিতে জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে মিছিল নিয়ে জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সামনে যেতে চাইলে পুলিশী বাধার মুখে পরে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করনে দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়দে সাকি। সমাবেশে বক্তব্য দেন রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, তাসলিমা আখ্তার, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, মনির উদ্দীন পাপ্পু, জুলহাসনাইন বাবু।

জোনায়েদ সাকি তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার কথায় কথায় বিএনপির সমালোচনা করলেও জ্বালানী বিষয়ে বিএনপির গণবিরোধী নীতিগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে নিষ্ঠার সাথে। ২০০১ সালে বিএনপির তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমান আওয়াজ তুলেছিলেন “দেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে, মাটির নিচে গ্যাস পচিয়ে লাভ নাই; বরং তা দ্রুততার সাথে তুলে রপ্তানী করতে হবে”। সেসময় পাইপলাইনে ভারতে গ্যাস রপ্তানীর জোর তৎপরতা শুরু হয়েছিল। তেল-গ্যাস কমিটি আন্দোলন করে সে তৎপরতা রুখে দিয়েছিল। আর বর্তমান সরকার মাটির নিচে গ্যাস ফেলে রেখে গ্যাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। সংকটের দোহাই দিয়ে এলএনজি আমদানির পথ খোলাসা করা হচ্ছে। কেননা সরকারের কাছের কিছু ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান এলএনজি আমদানির তৎপরতা শুরু করেছে। তাদের ব্যবসার স্বার্থে জনগণের ওপর বাড়তি খরচের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

অথচ বর্তমান সরকারের উদ্যোগেই যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ের বিশেষজ্ঞরা জরিপ করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের মাটির নিচে এবং সাগরের নিচে প্রায় ৪২ টিসিএফ গ্যাস মজুত রয়েছে। ক্রমবর্ধমান ব্যবহার হিসাব করলেও এ গ্যাস দিয়ে অন্তত ২০ বছর চলা সম্ভব। ২০ বছর পরে এলএনজির হিসাব আসতে পারে। ২০ বছর পরের খরচের বোঝা কেন এখন চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে জনগণের ওপর।

তিনি আরো বলেন, ২০১২ সালে সমুদ্র বিজয় করা হলো। অগভীর ও গভীর সমুদ্র মিলে ২৬টি ব্লকে ভাগ করে অনুসন্ধান করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেনি। অথচ মায়ানমার তাদের সীমানার গ্যাস উত্তোলন তো করছেই ইতিমধ্যে তা রপ্তানীও শুরু করেছে। সাগরের তলায় যদি অভীন্ন বেসিন থেকে তারা গ্যাস উত্তোলন করে থাকে তাহলে হয়তো আমরা যখন শুরু করবো তখন আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
সমাবেশে জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, জনগণ গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে অর্থের যোগান দিচ্ছেন তাদের বিল পরিশোধ করার সময়। কথা ছিল উন্নয়ন তহবিল দিয়ে বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হবে; গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করা হবে। কিন্তু সরকার নির্লজ্জের মতো এ টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করেছে, লুটপাট করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ বলেন, এ উপমহাদেশের মধ্যে আমাদের দেশের অর্থনীতি সবচেয়ে বড় লুটের অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাট চলছে। ব্যাংক ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা

লুটপাট করা হয়েছে, পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, রপ্তানী আয় বৃদ্ধি করছেন। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে বেশিরভাগ উদ্যোক্তারা ভারত, চীন বা প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারবেন না। অন্যদিকে হাইকোর্ট সুপারিশ করেছেন শুধুমাত্র পেট্রোবাংলা এবং তিতাসের দুর্নীতির ৫০ ভাগ কমাতে পারলেও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হবে না। অন্যদিকে সরকার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণের ওপর বাড়তি খরচের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে দুর্নীতির জাল বিস্তার করছে নতুন করে।

অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, কৌশলগত পণ্য হিসেবে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি মানে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হবে, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পাবে এতে করে সব কিছুর দাম বাড়বে এবং খেটে খাওয়া মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আরো কমে যাবে। গৃহস্থলিতে ব্যবহৃত গ্যাসের যে মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ বড় শহরগুলোতে নি¤œ আয়ের মানুষ অন্তত ৪টি পরিবার একটি চুলা ব্যবহার করেন। তারা গ্যাসের বিল পরিশোধ করেন ঘর ভাড়ার সাথে। ফলে গ্যাসের মূল বৃদ্ধির সাথে সাথে ঘর ভাড়া বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।