ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আসামি রুর উদ্দিনকে ভালুকা থেকে আটক করা হয়েছে। মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল আজ শুক্রবার সকালে তাঁকে আটক করে।

পিবিআইয়ের একটি সূত্র জানায়, ময়মনসিংহে দুপুরে ভালুকা সিড স্টোর এলাকায় অভিযান চালিয়ে নুর উদ্দিনকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে ফেনীতে পাঠানো হয়েছে।ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম সরাসরি জড়িত বলে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁরা দুজনই রয়েছেন সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁদের ধরতে পারলেই মূল রহস্য বের হবে বলে এলাকার মানুষ ও আইনশুঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধারণা। অবশ্য মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে সন্দেহভাজনদের ধরতে বুধবার রাত থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অভিযান শুররুকরেছে।

নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলায় ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর তাঁর মুক্তির দাবিতে সিরাজ উদ দৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ নামে কমিটি গঠন করা হয়। ২০ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক নুর উদ্দিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হন শাহাদাত হোসেন। তাঁদের নেতৃত্বে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে গত ২৮ ও ৩০ মার্চ উপজেলা সদরে দুই দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। তাঁরাই নুসরাতের সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার অন্যতম আসামী সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর মকসুদুল আলম ও তার সহযোগী মো. জাবেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাত ১০টায় কাউন্সিলর মকসুদুল আলমকে ঢাকা এবং তার সহযোগীকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মনি রুজ্জামান।তিনি বলেন, আটকৃত দুই জনকে ফেনীতে আনা হচ্ছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য গণমাধ্যমকে পরে জানানো হবে।

এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই নোমানের দায়ের করা মামলার নামীয় আসামীরা হলো অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা, পৌর কাউন্সিলর মকসুদুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।

এ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। এছাড়া ওই মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন এবং নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, নুসরাতের সহপাঠী ও মামলার প্রধান আসামী সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার ভাগনী উম্মে সুলতানা পপি ও আরেক মাদরাসা শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ এর ৫ দিন করে রিমান্ড চলছে।এজাহারভুক্ত আসামীদের মধ্যে এখোনো পলাতক রয়েছেন, সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের ওই মাদ্রাসার ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামিম, হাফেজ আবদুল কাদের ও নুর উদ্দিন।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানীর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।

পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় নয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোরও পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে বুধবার রাতে চলেই গেলো প্রতিবাদী নুসরাত।

এদিকে, ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তারই জেরে মামলা করায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। ওই মামলার পর সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।