কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলার চাহিদা মেটাতে ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে জেলার সাতটি গ্রামের পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। বাঙ্গালী জাতির অন্যতম ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প। এই শিল্পের চাহিদা বছরের অন্যসব সময়ে না থাকলেও পহেলে বৈশাখে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছাড়া যে চলেই না। তাই অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত সময় পাড় করতে হচ্ছে মৃৎশল্পীদের। তাঁরা মনের মাধুরী মিশিয়ে মাটির তৈরি খেলনার আকৃতি দিচ্ছেন।

এই শিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি। তাই মৃৎশিল্পীরা বিভিন্ন নদী থেকে মাটি সংগ্রহ করেন। চাকার মাধ্যমে মাটিকে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয় এখানে। তারপর সেই মাটির জিনিস পত্রগুলো আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়। মৃৎশিল্পীরা জানান, বাসন কোষনের চেয়ে খেলনা সামগ্রীর চাহিদা অনেক বেশি। বিভিন্ন মেলা, ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে এসব পণ্য বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।

পাল পাড়াগুলোতে বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা তৈরি করছেন মাটির গাছ, পাখি, ফুল, ফুলের টপ, ফলমূলসহ বিভিন্ন বাসন কোষন। কেউ মাটি গুঁড়া করে কাদা করছেন, কেউ মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করছেন, কেউবা বিভিন্ন পশুপাখির আকৃতি তৈরিতে ব্যস্ত। আবার কেউ মাটির তৈরি জিনিসপত্রে রং-তুলি দিয়ে হরেক রকমের নকশা করছেন। অনেকে তৈরি পণ্যগুলো রোদে শুকাচ্ছেন। এই কাজে মৃৎশিল্পীরা তাদের কাজকে দ্রুত শেষ করতে তাদের ছেলে মেয়েরাও অংশ নিয়েছে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রাম, কালকিনি উপজেলার থানার মোড় এলাকার পালপাড়া গ্রাম, ডাসার থানার ঘোষেরহাট বাজার এলাকার পালপাড়া গ্রাম, শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের পালপাড়া ও নলগোড়া এলাকার পালপাড়া গ্রাম, রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ও খালিয়া পালপাড়া গ্রামে প্রায় শতাধিক পরিবার এই মৃৎ শিল্পকে ধরে রেখেছে।

সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের পাল পাড়ায় প্রায় ৪০টি পরিবার বসবাস করেন। তাদের অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ১০টি ঘরে ঐতিহ্যকে আকরে ধরে আছেন এখনো। এই গ্রামের প্রবীন মৃৎশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল শেয়ার বিজ বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের কাজ করি। এখন তেমন একটা করি না। জীবিকার জন্য কৃষি কাজ করি। বৈশাখ এলে মেলায় কিছু মাঠির জিনিস বিক্রি হয়। তাই মাটির খেলনা বানাচ্ছি।’

মিনারা রানি নামে আরেক মৃৎশিল্পী বলেন, আগে মাটি কিনে আনতে হতো না। এখন মাটি কিনে আনতে হয়। মাটিরও অনেক দাম। সারাদিন বাড়ির সকল কাজ করার পাশাপাশি কিছু মাটির পাত্র বানাই তাতে আমার ছেলে এবং মেয়ের পড়াশুনার খরচ হয়। আমার ২ মেয়ে ১ ছেলে সবাই পড়াশুনা করে। এর থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে তাদের পড়াশুনার খরচ হয়। এই গ্রামের প্রবীন মৃৎশিল্পী সুশিল কুমার পাল বলেন, ৫০ বছর ধরে মাটির তৈরি এসব জিনিস তৈরি করছি। বৈশাখ এলে আমাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। এছাড়া বছরের আর বাকি দিনগুলো আমাদের অনেক কষ্টে পার করতে হয়। তাই অনেকে এই পেশা এখন ছেড়ে দিয়েছে।

জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় পাল সম্প্রদায়ের বেশ কিছু পরিবার মাটির সামগ্রী তৈরি করেন। যা আমাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্যের প্রকাশ। সরকার এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তাদের কাজ করতে অর্থের প্রয়োজন হলে তাদের জন্য সহজ সর্তে ঋণের ব্যাবস্থা করা হবে। তাদের সামাজিক কোন সমস্য হলে আমাদের কাছে জানালে আমরা তাদেরকে সেই দিক থেকেও সহযোগিতা করবো