মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না করায় খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রয়াত্ত পাটকলের শ্রমিকরা ফের ধর্মঘট-অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছেন। পাটকল শ্রমীক লীগ সিবিএ ননসিবিএ পরিষদের ডাকে সোমবার সকাল ৬টা থেকে এসব পাটকলে টানা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়। সেইসঙ্গে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলছে।মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ নয় দফা দাবিতে এর আগে ২ এপিল থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা পাটকলের উৎপাদন বন্ধ রেখে আন্দোলন করেছিল শ্রমিকের।

সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ এর সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের প্রভিডেন্ড ফান্ড-গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া প্রদান, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট কেনার বরাদ্দ বাড়ানো ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করার দাবি রয়েছে এই নয় দফার মধ্যে।

মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না করায় খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রয়াত্ত পাটকলের শ্রমিকরা ফের ধর্মঘট-অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন সোমবার।শ্রমিক নেতা মুরাদ জানান, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত খালিশপুর, দৌলতপুর, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, ইস্টার্ন, আলীম, জেজেআই ও কার্পেটিংসহ মোট নয়টি জুট মিলের প্রায় ৩৩ হাজার শ্রমিক রয়েছে। তাদের ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে।

এদিকে শ্রমিকদের দাবি মানা না পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট জুটমিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন।

বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন জানান, ৯৬ ঘণ্টার এ কর্মসূচির পর বিরতি দিয়ে আগামী ২৫ এপ্রিল তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন।

এছাড়া ২৭ এপ্রিল থেকে আবার ৭২ ঘণ্টার পাটকল ধর্মঘটসহ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ছয় ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি। ধর্মঘটের কারণে ভোর ৬টা থেকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি।

খুলনার রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বেলা ১২টার পর পর্যায়ক্রমে ট্রেন গুলো ছাড়া হবে।

খালিশপুর থানার ওসি সরদার মোশাররফ হোসেন জানান, আন্দেলনরত শ্রমিকরা খুলনা-যশোর মহাসড়কের নতুনরাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করে রেখেছে। ফলে খুলনার সাথে সড়ক ও রেলপথে দেশের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম: পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার কয়েকটি স্থানে রাজপথ- রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারিরা। অবরোধের কারণে নগরীর মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন হয়ে হাটহাজারী যাওয়ার পথটিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন্ও।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে নগরীর আমিন জুটমিলের সামনের সড়কে ও জুটমিলের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইনে অবস্থান নেন কয়েক’শ শ্রমিক-কর্মচারি। বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জুটমিলের ভেতর থেকে ভ্যানসহ বিভিন্ন সামগ্রী এনে সড়কের ওপর ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু করেন।

নগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) পরিত্রান তালুকদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শ্রমিক-কর্মচারিদের অবরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গামী কেবল একটি শাটল ট্রেন ছেড়ে গেছে। প্রথম ট্রেনের পর আর কোনো ট্রেন চলতে দেওয়া হয়নি। আটকে দেওয়া হয়েছে নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন অভিমুখী একটি যাত্রীবাহী ট্রেনও।

এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকরা।মজুরি কমিশন, গ্র্যাচুইটি ও পিএফের টাকাসহ ৯ দফা দাবিতে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকরা বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় দেওয়া ৯৬ ঘণ্টা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলছে।