যৌন হয়রানির অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত মাদরাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে বেত দিয়ে পিটিয়েছিলেন বলে জানান রাফির মা শিরিন আক্তার।

সোনাগাজী উপজেলার উপজেলার উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে শিরিন আক্তার বলেন, আমাকে ভাল বলেন আর খারাপ বলেন আমি তাকে গুনে ৪টি বেতের বাড়ি দিয়েছি। বেতটিও তার ছিল। গত ২৭ মার্চ ঘটনা শুনেই আমি রাফিকে নিয়ে মাদরাসায় গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি অধ্যক্ষ হাত-পা ছেড়ে সোফার উপর বসে আছেন। মেয়েকে শ্নীলতাহানির বিষয়ে প্রশ্ন করার পর তিনি আমাকে রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের ভয় দেখান এবং অশ্লীল মন্তব্য করেন। তখন আমি স্থির থাকতে পারেনি। ভীত না হয়ে সামনে পাওয়া তার টেবিলের উপর রাখা একটি বেত দিয়ে অধ্যক্ষকে ৪ বার বেত্রাঘাত করি।

শিরিন আক্তার জানান, মাকে নিয়েই ছিল নুসরাতের যত আহ্লাদ। ছোটবেলা থেকেই মাকে ছাড়া ঘুমাতো না। মাকে নিয়ে দেয়ালে অনেক কিছু লিখেছেন। ছোটবেলা থেকেই বেশ সাহসী ছিলেন নুসরাত। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীও ছিল নুসরাত। ২৭ মার্চ শ্লীলতাহানির ঘটনার পরবর্তী অবস্থা বর্ণনা করে শিরিন আক্তার বলেন, এ অবস্থা দেখে অনেকেই জড়ো হয়ে যান। সেখানে বসেই আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছি। পরবর্তীতে তিনি মাদ্রাসায় এসে সিরাজকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

নুসরাতের মা আরো বলেন, অনেক আগে থেকেই মাদরাসার অধ্যক্ষের অপকর্মের কথা শুনে এসেছি। নুসরাত পাশের একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করার পর এই মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছি। আমরা আলিম পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর নুসরাতকে অন্য মাদরাসায় নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেছি। তার আগেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নুসরাত চির বিদায় নিলো।

মেয়েকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন নুসরাতের মা। এ মামলায় গত ২৭ মার্চ গ্রেপ্তার হয় অধ্যক্ষ সিরাজ। ওই মামলা তুলে নিতে গত ৬ এপ্রিল নুসরাতকে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে।