ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হাফেজ আবদুল কাদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়েছেন। তাঁকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সরাফ উদ্দিন আহমদের আদালতে হাজির করা হয়।

আবদুল কাদের সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক। বুধবার রাতে তাঁকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। কিছুক্ষণ পরে তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড শুরু হবে।

এর আগে যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আবদুল কাদের মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার পক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন, কারাগারে সাক্ষাৎ করা এবং হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে, অর্থাৎ ৪ এপ্রিল সকালে এবং রাতে পৃথক পৃথক সভায় উপস্থিত ছিলেন। ১২ জনের উপস্থিতিতে নুসরাত হত্যার রূপরেখা নির্ধারণে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তাঁর পরামর্শে হত্যাকাণ্ডে কে কোথায় থাকবে, তা নির্ধারিত হয়।

সোনাগাজীতে এখনো মানববন্ধন চলছে। আজ বিকেলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংগঠনটি সোনাগাজীতে নুসরাত হত্যার বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করবে।

এদিকে, ফেনী জেলার সোনাগাজীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় আরো দুজনকে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাঁরা হলেন হাফেজ আবদুল কাদের ও মো. শরীফুল ইসলাম ওরফে শরীফ (২০)।বুধবার ঢাকার হোসেনী দালান এলাকা থেকে আবদুল কাদের ও কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে শরীফকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

আবদুল কাদের সোনাগাজী আমিরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব সফরপুর গ্রামের মনছুর খান পাঠানবাড়ির আবুল কাসেমের ছেলে। তিনি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক এবং ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার অনুগত হিসেবে মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকতেন আবদুল কাদের।

আবদুল কাদের গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার পরদিন মালামাল নিয়ে হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে যান।অন্যদিকে শরীফুল ইসলাম নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সময় নুর উদ্দিনের সঙ্গে মাদ্রাসার গেটে পাহারায় ছিল বলে কয়েকজন আসামি জানিয়েছে। শরীফও একই মাদ্রাসার ছাত্র।

নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় মুখোশ পরা চার/পাঁচজন নুসরাত জাহান রাফিকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তারা নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।গত ১০ এপ্রিল বুধবার রাত ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি।