গাজীপুরে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কলেজ ছাত্রী শারমিন আক্তার লিজা হত্যার দ্রুত বিচার দাবিতে বৃহষ্পতিবার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। এসময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রায় এক ঘন্টা অবরোধ করে। এদিকে লিজা হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের ভাই সাদিম আহেম্মদ সুজন বাদি হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লিজা খুনের এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মোস্তাকিম রহমান রাজু বিকেলে গাজীপুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানার ওসি এমদাদ হোসেন ও এলাকাবাসি জানায়, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি এলাকার ক্যামব্রিজ কলেজের একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্রী শারমিন আক্তার লিজাকে (১৮) বুধবার দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরিকাঘাতে খুন করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সদর থানাধীন সালনা এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে স্থানীয় কোনাবাড়ী লিংকন মিলেনিয়াম কলেজের ছাত্র মোস্তাকিন রহমান রাজু (১৭)। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির দাবীতে বৃহষ্পতিবার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। বেলা ১১টার দিকে ক্যামব্রিজ কলেজ ও লিংকন মিলেনিয়াম কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ী এলাকায় জড়ো হয়। তাদের সঙ্গে অংশ নেয় স্থানীয়রাও। এসময় তারা ওই এলাকায় মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে কোনাবাড়ি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলে প্রায় এক ঘন্টা পর ওই সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

এদিকে কলেজ ছাত্রী লিজা হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের ভাই সাদিম আহেম্মদ সুজন বাদি হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত ঘাতক কলেজ ছাত্র মোস্তাকিন রহমান রাজু (১৯) ছাড়াও তার সহযোগী শামীম (২০), হায়দার (২০), জুয়েল (১৯) ও রোমানকে (২০) এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতের ইন্সপেক্টর আতিকুর রহমান জানান, কলেজ ছাত্রী শারমিন আক্তার লিজা হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মোস্তাকিন রহমান রাজুকে (১৯) বৃহষ্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট হামিদুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। গ্রেফতারকৃত রাজু আদালতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় দু’ঘন্টা ব্যাপী স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দি প্রদানকালে পুরো ঘটনার বর্ণনা করে সে। স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদানের পর আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

এদিকে বুধবার ময়না তদন্ত শেষে রাত ১১টায় কোনাবাড়ি আমবাগ এলাকায় নিহত শারিমন আক্তার লিজার নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

বৃহস্পতিবার কোনাবাড়ি আমবাগ এলাকায় নিহত কলেজ ছাত্রী শারমিন আক্তার লিজার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে তার মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই লিজার জন্য বিলাপ করছেন। নিহতের সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা নিহতের বাড়িতে ভিড় করছেন। স্বজনরা পরিবারের সবাইকে শান্তনা দিচ্ছেন। এলাকাবাসী লিজার হত্যাকারীর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে ফাঁসির দাবি জানান।

নিহতের ভাই সাদিম আহমদ সুজন, পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি এলাকার ক্যামব্রিজ কলেজের একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্রী শারমিন আক্তার লিজা (১৮) স্থানীয় আমবাগ ঈদগাহ মাঠ এলাকার মোঃ শফিকুল ইসলামের মেয়ে। কলেজে আসা যাওয়ার পথে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নানাভাবে উত্যাক্ত করে ও হুমকি দিয়ে আসছিল মোস্তাকিন রহমান রাজু। কোনাবাড়ী আমবাগ পশ্চিমপাড়া এলাকার হাজী বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে রাজু স্থানীয় কোনাবাড়ী লিংকন মিলেনিয়াম কলেজে লেখা পড়া করে। রাজুর বাবা স্থানীয় একটি কারখানার নিরাপত্তা প্রহরী এবং তার মা ঝুটের একটি গোডাউনে কাজ করে। রাজুর দেয়া প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় লিজার উপর ক্ষিপ্ত হয় রাজু। বুধবার দুপুরে বর্ষ উত্তীর্ণ পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা রাজু ও তার সহযোগিরা কোনাবাড়ি কাঁচাবাজার এলাকায় লিজার পথরোধ করে। এসময় রাজু ছুরি দিয়ে লিজার বুক ও পেটে আঘাত করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক রাজুকে রক্তাক্ত ছোরাসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসি। পরে গুরুতর আহত লিজাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বখাটে রাজুর বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক মেয়েকে উত্যাক্ত করার অভিযোগ রয়েছে।