বর্তমান সরকারের ষড়যন্ত্র ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার,একেবারে মিশিয়ে দেওয়ার। সে কারণেই খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি রাখা হয়েছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, শত শত কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শত বছর টিকে থাকবে আওয়ামী লীগের এই নির্যাতনের কারণেই। সুতরাং হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে খালেদা জিয়া: তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বও বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন। শত নাগরিক নামের একটি সংগঠন এ প্রকাশনা উৎসব আয়োজন করে।

শত নাগরিকের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং বইটির সম্পাদক কবি আব্দুল হাই সিকদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যারা মনে করেন বিএনপি নিঃশেষ হয়ে গেছে, আমি কখনো তাদের সঙ্গে একমত নই। বিএনপি প্রতিটি সংকট মুহূর্তে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং উঠে দাঁড়িয়েছে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। কারণ, বিএনপি এই দেশের মানুষের দল।

মির্জা ফখরুল বলেন, বার বার চেষ্টা হয়েছে বিএনপিকে ভেঙে ফেলার, বার বার চেষ্টা হয়েছে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার। এবারও এই একটিমাত্র উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তার রাজনীতিকে ধ্বংস করে ফেলা এবং রাজনীতি থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই কারাবন্দি করা হয়েছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না, হতে পারে না। কারণ, বিএনপির রাজনীতি এ দেশের মানুষের রাজনীতি।

কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কখনো হতাশ হবেন না। হতাশার কথা বলবেনও না। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেত্রী যেখানেই থাকুন তিনিই আমাদের অনুপ্রেরণা, তিনিই আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্র মুক্ত করবেন।

খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি এত অসুস্থ যে হুইল চেয়ার ছাড়া হাঁটতে পারেন না, ঠিকমতো বসতেও পারেন না। বিছানা থেকে ওঠার জন্য অন্যের সাহায্য নিতে হয়। তারপরও এতটুক মনোবল তিনি হারাননি। এই মনোবল আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে হবে, তরুণদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে হবে, যুবকদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে হবে। সেই সঞ্চারণের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশমাতা ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে গণতন্ত্রকে বন্দি রাখা সম্ভব নয়। সে কারণেই তাকে বন্দি রাখা হয়েছে। সুতরাং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রের মাতাকে কারাগারে রেখে গণতন্ত্র মুক্ত করা যাবে না। সেইসঙ্গে এও মনে রাখতে হবে, কার্যকর আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না।

বাংলাদেশের অবস্থা এখন অস্বাভাবিক— এমন মন্তব্য করে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংসদ একতরফা, উপজেলা নির্বাচনে ৪৪৫টির মধ্যে ৪৪১টিতে আওয়ামী লীগ, এফবিসিসিআই নির্বাচন একতরফা। অর্থাৎ জনগণের প্রতিনিধি কোথাও নেই। এই বিষয়টিই অস্বাভাবিক, অনৈতিক। এই অস্বাভিবক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকারের ষড়যন্ত্র ছিল বিএনপিকে নিশ্চহ্ন করে দেওয়ার, একেবারে মিশিয়ে দেওয়ার। বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, শত শত কর্মীকে হতাহত করা হয়েছে, যেন বিএনপি কোনোদিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি আজ আপনাদেরকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের এই অবিচার, এই নির্যাতন, এই অত্যাচারের কারণে বিএনপি আগামী শত বছর টিকে থাকবে।

মওদুদ আহমদ বলেন, আপনরা বলতে পারেন, আমরা ব্যর্থ হয়েছি— হ্যাঁ বলেন। তবে আপনাদের বুঝতে হবে, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কারণে একটা তুচ্ছ মামলায় কারাগারে আছেন। আমরা আইনজীবীরা এই মামলা নিয়ে কাজ করছি, কাজ করে যাব। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে, আন্দোলন ছাড়া তার মুক্তি সম্ভব নয়।