ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডে অবৈধ অর্থ লেনদেনের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। শনিবার সকালে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মৃখোমুখি হয়ে এসব কথা জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম।

নুসরাত হত্যার হুকুমদাতা ও আলোচিত ওই হত্যাকান্ডে যারা অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে অবৈধ অর্থ লেনদন হয়েছে। অর্থের জোগানদাতা থেকে শুরু করে কয়জনকে সে অর্থ দেওয়া হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান সিআইডি কর্মকর্তা।

বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল বলেন,জানতে পেরেছি, এখানে অবৈধ অর্থ লেনদেন হয়েছে। এ সপ্তাহেই আমরা একটি টিম পাঠাব, ওখানে আমাদের টিম অনুসন্ধান করে দেখবে যে, মানিলন্ডারিং হয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে আমরা নিয়মিত মামলা রুজু করব।

অবৈধ অর্থ, সেটা কেরোসিন কেনার জন্য হোক, কাউকে প্রভাবিত করার জন্য টাকা ইনভেস্ট করা হোক, বা কেউ যদি টাকা দিয়ে থাকে এই মৃত্যু অথবা শ্লীলতাহানির ক্ষেত্রে। এ হত্যাকা- প্রভাবিত করার জন্য, সাপ্রেস করার জন্য, অথবা খৃন করার জন্য যদি টাকা ইনভেস্ট করে থাকে, সেটা মানিলন্ডারিং, বলেন সিআইডি কর্মকর্তা। এদিকে,মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি বোরকা উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শনিবার দুপুরে মামালার এজহারভূক্ত গ্রেপ্তার আসামী যোবায়ের আহাম্মদকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পিবিআইর তদন্ত টিম।

মামলাতর তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইর পরিদর্শক (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত যোবায়ের আহাম্মদকে নিয়ে পিবিআইর চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবালের নেতৃত্বে একটি দল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সোনাগাজী সরকারী কলেজ সংলগ্ন ডাঙ্গি খাল থেকে একটি বোরকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান পরিচালনা করে পিবিআই। তিনি আরো বলেন, বোরখা এ হত্যা মামলার অন্যতম আলামত।

যোবায়ের আহাম্মদ আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার ৫ নম্বর আসামী। সে সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতলি গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে।নুসরাত হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকায় দায় স্বীকার করে এখন পর্যন্ত ৫ জন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এদের সবাই কিলিং মিশনে যোবায়ের আহাম্মদ সরাসরি অংশ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ১৪ এপ্রিল রবিবার রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্ধি দিয়েছে মামলার অন্যতম আসামী নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামিম। ১৭ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে আবদুর রহিম ও শরীফ, ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় একই আদালতে হাফেজ আবদুল কাদের পরদিন ১৯ এপ্রিল অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দেন।

আলোচিত এ মামলা এ পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে ওই অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠি আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, জান্নাতুল আফরোজ মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামীলীগ সভাপতি ও ওই মাদরাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন।

এর আগে টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে ১০ এপ্রিল বুধবার রাত নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি। পরদিন সকালে ময়তদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিলে বিকালে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।