ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার তিনতলার ছাদে ডেকে নিয়ে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহার রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেয় জাবেদ নামের এক যুবক। আর এ সময় নুসরাত যাতে নড়াচড়া করতে না পারে সেজন্য তাঁকে ছাদে ফেলে তাঁর বুক চেপে ধরে রাখে অপর আসামি কামরুন নাহার মনি।

গতকাল শনিবার ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে দুই আসামি দীর্ঘসময় নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর এই দাবি করেছে চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

রাতে ফেনীর আদালত চত্বরেই পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল আসামিদের জবানবন্দি ও রাফি হত্যা মামলার গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পর্কে তথ্য দেন। এ সময় মো. ইকবাল বলেন, ‘নুসরাত রাফির হত্যাকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী জাবেদ এবং কামরুন নাহার মনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা তাদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।’

‘জাবেদ, মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলেছে এবং এই পরিকল্পনায় তার অংশগ্রহণ ছিল। কামরুন নাহার মনি শোয়া অবস্থায় বুক চেপে ধরে রেখেছে যাতে সে নড়াচড়া না করতে পারে।’

পিবিআই আরো জানায়, এ মামলায় এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাঙামাটি থেকে ইফতেখার মাহমুদ রানা ও কুমিল্লা থেকে মো. মামুন নামের সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করে পিবিআই। আজ রোববার এই দুজনকে আদালতে হাজির করা হবে।

এ ছাড়া শনিবার বিকেলে একই আদালতে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি রুহুল আমিনকে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে হাজির করে পিবিআই। শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সরফ উদ্দিন পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি বোরকা সোনাগাজী পৌর শহরের সরকারি কলেজ সংলগ্ন ডাঙ্গি খাল থেকে জব্দ করা হয়েছে।

এর আগে এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানা যায় বোরকা পরে পাঁচজন হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিল।

গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতের সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পা তাঁর বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদ দিলে- ওই ভবনের ছাদে যান নুসরাত। সেখানে বোরকা ও নেকাব পরা চার-পাঁচজন তাঁকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত।