দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত আরও চারজন।তারা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আব্দুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন।

সোমবার বিকালে সংসদ ভবনে স্পিকারের কক্ষে তারা শপথ নেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।সংসদের হুইপ ইকবালুর রহীম এসময় উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতা হারুনের সঙ্গে তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াও ছিলেন। এই চারজন শপথ নেওয়ায় এখন কেবল বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই বাকি আছেন।একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ নেওয়ার ক্ষেত্রে সোমবারই শেষ দিন; অধিবেশন শুরুর পর ৯০ দিনের মধ্যে কেউ শপথ না নিলে ওই আসনে নতুন নির্বাচন আয়োজনের কথা ইসি ইতোমধ্যে জানিয়েছে।

এবারের নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মোট ছয়জন; তার মধ্যে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদ গত বৃহস্পতিবারই শপথ নিয়েছিলেন। এরপর তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কারও করা হয়।বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত গণফোরামের দুজন সুলতান মো, মনসুর আহমেদ ও মোকাব্বির খানও জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে শপথ নিয়েছেন।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে দাবি করে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট।তবে বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা বলছেন, এলাকার মানুষের চাপে সংসদে যেতে শপথ নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।জাহিদের পর নতুন চারজনের শপথ নেওয়ার দিনই ফখরুল এক অনুষ্ঠানে বলেন, বর্তমান সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ নয়।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ সোমবার এক সভায় বলেন, দুটি কারণে ফখরুল ফখরুল শপথ নিচ্ছেন না। একটি হল দলীয় পদ হারানোর ভয়ে; অন্যটি হল, নিজের এলাকা থেকে নির্বাচিত হননি বলে নির্বাচনী এলাকার মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নেই।

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ঠাকুরগাঁওয়ে নিজের আসনে হারলেও বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন, যে আসন থেকে বরাবর ভোট করে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।শপথ নিতে যাওয়ার আগে হারুন সোমবার সকালে বলেছিলেন, সংসদে যাওয়ার জন্য এলাকার মানুষের চাপে রয়েছেন তিনি। তাই দলের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছেন। বিকালের মধ্যে দলের সিদ্ধান্ত পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন হারুন; তবে দল থেকে তাকে কী সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও কিছু বলেননি তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত ৮ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৭ জন শপথ গ্রহণ করলেও শপথ নেননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ করার শেষ দিন ছিল আজ। ফলে নিয়ম অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের সদস্যপদ বাতিল করে তার নির্বাচনি আসন বগুড়া-৪ শূন্য হওয়ার কথা। তবে মির্জা ফখরুল কোনও কারণ দেখিয়ে শপথ গ্রহণের তারিখ বাড়ানোর জন্য চিঠি দিলে সংসদের স্পিকার সময় বাড়াতে পারবেন।

সংবিধানে বলা আছে, সংসদের প্রথম বৈঠকের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সদস্যপদ বাতিল করে আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসে গত ৩০ জানুয়ারি। এই হিসাবে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণের শেষ দিন ছিল আজ। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল পৌনে ছয়টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের কাছে শপথ গ্রহণ করেন বিএনপির নির্বাচিত চারজন সংসদ সদস্য। তারা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান জাহিদ। শপথ নেওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থেকে দাবি করা হচ্ছে, নির্বাচিত এই ৭ সংসদ সদস্য জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য শপথ গ্রহণ করেছেন। ফলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।গত ৭ মার্চ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ গ্রহণ করেন। এরপর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপর গত ২ এপ্রিল গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খানও শপথ গ্রহণ করেন। তবে তাকে বহিষ্কার না করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ আসনের মধ্যে মাত্র আটটি আসনে জয় পায় বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাদের মধ্যে বিএনপি থেকে ছয় জন এবং গণফোরাম থেকে নির্বাচিত হন দুই জন। তবে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটের দিন রাতেই ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।