ধান ফলনের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে জৈব সোনা খ্যাত প্রো বায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার। ধান ফলনে প্রচলিত সারের ব্যবহার ৫০ ভাগ কমিয়ে এ জৈব সোনা ব্যবহার করলে ফলন ১০ থেকে ১৫ ভাগ বৃদ্ধি পেতে পারে। পরিবেশ বান্ধব সম্ভাবনাময় এ প্রো বায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে তা দ্রুত কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেবার আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। সোমবার গাজীপুরের সালনাস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরকৃবি) এ ব্যাকটেরিয়ার উপর আয়োজিত দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষন কর্মশালায় বক্তারা এ আহবান জানান।

ধান চাষে সারের ব্যবহার কমাতে প্রো-বায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার উদ্ভাবন (শেয়ারিং ডিসকোভারী অব ফারটিলাইজার রিডিউসিং প্লান্ট প্রো-বায়োটিক ব্যকটেরিয়া ইন রাইস) শীর্ষক এ প্রশিক্ষন কর্মশালার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্ল্যান্ট প্যাথলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক অধ্যাপক ড মোঃ আব্দুল মান্নান আকন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়া। অনুষ্ঠানে প্ল্যান্ট প্রো-বায়োটিক ব্যাক্টেরিয়ার উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে ড. দিপালী রাণী গুপ্তা ও ঝিনাইদহের উন্নয়ন ধারা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোঃ রুবেল আলী বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষকবৃন্দ, বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, গবেষক, এনজিও প্রতিনিধি, কৃষি সংশ্লিষ্ট পন্য উৎপাদনকারী বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধি ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকসহ শতাধিক লোক অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ধান চাষে সারের ব্যবহার সর্বোচ্চ। এত বেশী সার ব্যবহার করা হয় যে, উৎপাদনের একটি বিশাল অংশ চলে যায় সারের পেছনে। প্রতিবছর বিপুল পরিমান সার বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। ফলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি প্রতিনিয়ত। কিন্ত প্রো বায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করলে সারের ব্যবহার ৫০ ভাগ কমানো যাবে। অন্যদিকে ফলন বাড়বে ১০ থেকে ১৫ ভাগ। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। বক্তারা আরো বলেন, ইউরিয়া সার উৎপাদনে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ মিথেন গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। ফসল উৎপাদনে সার ব্যবহার করলে একদিকে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে জমির উর্বরতা কমছে, মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে ।

বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম জানান, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে এবং মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও গুনাগুন বজায় রেখে পরিবেশ বিপন্ন রক্ষা করতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষনা করে এ প্রো বায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার উদ্ভাবন করেছি। মাটির স্বাস্থ্য যদি ভাল থাকে, তাহলে কৃষি উৎপাদন ভাল হবে। তিনি বলেন, দেশে এখনো এটা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়নি। শিল্প সংশ্লিষ্টরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে দ্রুত এটা কৃষকদের কাছে পৌছবে এবং এর সুফল তারা ভোগ করতে পারবে। সারের প্রয়োগ কমিয়ে এ ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার বাড়ালে দেশে কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে।