কেরানীগঞ্জ নয় স্থায়ী কেমিক্যাল পল্লী হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে। স্থায়ী কেমিক্যাল পল্লী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে ৫৪টি কেমিক্যাল গুদাম স্থাপনে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে খরচ হবে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে এ প্রকল্প দুটির অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে কেমিক্যাল পল্লী নিয়ে আলোচনার বিষয়ে মন্ত্রী জানান, কেরানীগঞ্জে হচ্ছে না বিসিক ক্যামিক্যাল পল্লী। জনবহুল এবং অপেক্ষাকৃত কম জায়গা হওয়ায় এর পরিবর্তে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে এ পল্লী স্থাপন করা হচ্ছে। সম্প্রতি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর আগে ৫০ একর জমিতে এটি গড়ে তোলার কথা থাকলেও এখন জমির পরিমাণ বাড়িয়ে ৩১০ একর করা হয়েছে। এজন্য ১ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা খরচে সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী’ প্রকল্পটি। চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।

এম এ মান্নান জানান, এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলিতে কেমিক্যাল গোডাউনের দুর্ঘটনায় বহু হতাহতসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধসহ আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা গোডাউন অপসারণের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে আধুনিক সুযোগ সুবিধার একটি বিসিক কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য মোট ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা খরচে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনে বিসিক কেমিকেল পল্লী ঢাকা শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের জন্য আবাসিক এলাকার সব ধরণের রাসায়নিক কারখানা গোডাউন স্থানান্তরে স্থাপনাধীন বিসিক কেমিক্যাল পল্লীটি আরো বড় পরিসরে এবং তুলনামূলক কম জনবহুল এলাকায় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সে জন্য অনুমোদিত বিসিক কেমিক্যাল পল্লীটি ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় ৫০ একর জমিতে স্থাপনের পরিবর্তে ঢাকা-দোহার সড়ক বরাবর মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার তুলশিখালী ব্রিজ সংলগ্ন গোয়ালিয়া, চিত্রকোট ও কামারকান্দা নামক তিনটি মৌজায় মোট ৩১০ একর জমিতে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বৈঠকে হওয়া আলোচনার বিষয় হিসেবে মন্ত্রী আরো জানান, যত দিন এই কেমিক্যাল পল্লী স্থাপন না হচ্ছে ততদিন পুরান ঢাকাকে নিরাপদ করতে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্থাপন করা হচ্ছে ৫৪টি কেমিক্যাল গোডাউন। পুরান ঢাকার চুরিহাট্টার অগ্নিকান্ডের পর অধিক সচেতনতার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকার কদমতলীর শ্যামপুরে এসব গুদাম নির্মাণের লক্ষ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ নামের একটি প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিসিআইসি।

কেমিক্যাল পল্লী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো জানান, কেমিক্যাল পল্লীর জন্য বরাদ্দ দেয়া জমি যাতে অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনের বেশি এক ইঞ্চি জমিও যাতে অধিগ্রহণ করা না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, এখন থেকে প্রকল্প তৈরির সময়ই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের বিষয়টি উল্লেখ থাকতে হবে।

একনেক বৈঠকে অন্য প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, কারা রাজস্ব খাতে আর কারা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাবে এটা প্রথমেই স্পষ্ট করতে হবে। তা না হলে প্রকল্প শেষে যারা কান্নাকাটি করেন, তাদেরকে আর সেটি করতে হবে না। গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পর যেদিক দিয়ে পাইপ যাবে সেদিক চিহ্নিত করতে রাখতে হবে। কেননা অনেক সময় না জেনে হাল চাষ করার সময় পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে। তাছাড়া, সব প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার তাগিদ দিয়েছে মন্ত্রী আরও জানান, এখন থেকে ভকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষায় শুধু সায়েন্স নয়, যেকোনও বিষয় থেকে যাতে আসতে পারে সেই উদ্যোগ নিতে হবে।

কেমিক্যাল পল্লী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে ৫৪টি কেমিক্যাল গুদাম স্থাপনসহ মোট ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবারের একনেক বৈঠকে। সবগুলো প্রকল্প মিলে বাস্তবায়নে খরচ পড়বে ১০ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫ হাজার ২২০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারি সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৯০ কোটি টাকা খরচ করা হবে। পুরান ঢাকাকে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি থেকে মুক্ত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯৭১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরার পাইপলাইন নির্মান প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষনের জন্য গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সমাজকল্যাণ ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। নীলফামারী জেলার চাড়ালকাটা নদী সোজাকরণ এবং তিস্তা নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।